
বাংলাদেশে এখন উন্নয়ন ও শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে উপনীত হয়েছে

সৈয়দ বোরহান কবির : বাংলাদেশ সারা বিশে^ এখন উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার যে রোল মডেল, এটা সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্য। বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন এবং শেখ হাসিনার সমার্থক শব্দতে উপনীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন পরিচালনা করছেন এবং উন্নয়ন কর্মকা-কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সেটা হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। সোনার বাংলা বলতে আমরা বুঝি একটি বৈষম্যহীন, অগ্রসরমান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।
একাত্তরে যে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম আমরা, সেটার স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশ একটা উন্নত, স্বনির্ভর, আধুনিক, প্রগতিশীল ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেই স্বপ্নটা বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর শেখ হাসিনা তিলে তিলে সংগ্রাম করে বাংলাদেশের জনগণকে ক্ষমতায়িত করে আজকে যে জায়গায় আজকে যে জায়গাটিতে এসেছেন সেখানে বাংলাদেশ এখন বিশে^র উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আছে। এখন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা ছাড়া এই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা কতোটুকু থাকবে সেটি নিয়েও অনেকের সন্দেহ আছে।
১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর থেকে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ।
গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহাজোট গড়ে ওঠে। ১৪ দল ও মহাজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা।
ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন তিনি। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েক দফা গৃহবন্দি হয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে চার-তৃতীয়াংশ আসনে বিশাল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়।
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এরমধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তিবৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট- বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা ১৭ বছর প্রধানমন্ত্রীত্ব করছেন। বিশে^ অবশ্যই তিনি সবচেয়ে প্রবীণ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী। তাছাড়া এখন বিশে^ যে চলমান ইস্যুগুলো আছে, একদিকে উগ্রবাদ, অন্যদিকে জলবায়ু পবিবর্তনের ঝুঁকি। এই সমস্ত ইস্যুতে তিনি যেভাবে তার চিন্তা ও নীতি কৌশল দিচ্ছেন তাতে তিনি বিশে^র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে গেছেন। কৌশলগতভাবে এবং তার নীতি ও আদর্শের কারণে শেখ হাসিনা এখন বিশে^র সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে একজন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তা, কৌশল এবং দূরদৃষ্টিতার কারণে শুধু আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা হননি। তিনি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন যেখানে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে ছাড়া বাংলাদেশের অগ্রগতিও উন্নন এখন চিন্তা করা যায় না। তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন, এখন তিনি পুরো বাংলাদেশের নেতায় পরিণত হয়েছেন। পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমিরুল ইসলাম
