সরকারের সার্বিক পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি সাড়ে ১১ লাখ কোটি টাকা, জিডিপি’র ৩৮%
সোহেল রহমান : করোনা জনিত কারণে সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের পুঞ্জিভূত সার্বিক ঋণস্থিতি বেড়েছে। চলতি বছরের গত জুন শেষে সরকারের মোট ঋণস্থিতি (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর ৩৮ শতাংশ। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বা ২০২০ সালের জুন শেষে সরকারের সার্বিক ঋণস্থিতি ছিল ১০ লাখ ৬ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এটি ছিল ৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সরকারের ঋণস্থিতি বেড়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫ হাজার কোটি টাকা। জিডিপি’র হিসাবে ঋণস্থিতি বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পুঞ্জিভূত স্থিতি ছিল যথাক্রমে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা এবং ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের মতে, করোনা জনিত কারণে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক ঋণ স্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর টেকসই ঋণ কাঠামো (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদন্ড অনুযায়ী, জিডিপি’র ৭০ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অর্থ বিভাগ বলছে, সার্বিকভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি-তে পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) তুলনায় বাড়লেও বৈদেশিক ঋণের হার কমেছে। গত অর্থবছরে জিডিপি-তে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণস্থিতির হার হচ্ছে যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এ হার ছিল যথাক্রমে ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান মধ্য মেয়াদী ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল আরও আধুনিকায়ন করা হবে এবং আঙ্কটাড-এর কারিগরি সহায়তায় অর্থ বিভাগে ডেট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালাইসিস সিস্টেম নামে একটি কাস্টমাইজ ডাটাবেজ স্থাপন করা হবে। এছাড়া সরকারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ঋণ পরিস্থিতি আলোচনা ও বিশ্লেষণ, ঋণ গ্রহণের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা এবং এ-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণে আগামীতে একটি ‘ঋণ সম্মেলন’-এর আয়োজন করা হবে।
সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণের ঋণের মধ্যে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা সঞ্চয়পত্র খাত থেকেই সরকার ঋণ নিয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ খাতে সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা (২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ঋণস্থিতি ছিল ৩ লাখ ৩ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা)। অন্যদিকে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট গৃহীত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা (২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ঋণস্থিতি ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ২৯১ কোটি টাকা)। ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে গৃহীত ঋণের মধ্যে ট্রেজারি বন্ড ও স্পেশাল ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৫১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা এবং ‘সুকুক’-এর মাধ্যমে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এছাড়া অন্যান্য খাত খেকে মোট গৃহীত ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৪৪ হাজার ৩১ কোটি টাকা।
ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা (২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ঋণস্থিতি ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা)। এর মধ্যে বহুপক্ষীয় ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা এবং দ্বি-পাক্ষিক ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা।