দেশে নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি দ্রব্যমূল্য ৯৯ শতাংশ স্থিতিশীল
সোহেল রহমান : দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারের সর্বমহল থেকে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হলেও চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা শিথিল করা হয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিপরীতে প্রকৃত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এটি গত অর্থবছরের অর্জনের তুলনায় কম।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চলতি অর্থবছরের ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ)-তে এ লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ঋণাত্মক (-১৫.৪৬%)।
এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রপ্তানি বাজার বাড়ানোই সমস্যা বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ও দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দুর্বলতা রয়েছে। এছাড়া বিশ্বায়নের ফলে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
রপ্তানি বাড়াতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কৌশলগুলোর মধ্যে এলডিসি সার্ভিস ওয়েভার ও ট্রিপস এক্সেম্পশন-কে ব্যবহার করে ওষুধ খাতকে শক্তিশালী করা ও সেবা খাতে রপ্তানি বাড়ানো এবং টিপিএস-ওআইসি-এর রুল্স অব অরিজিন বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, রপ্তানি বাড়াতে চলতি অর্থবছরে নতুন ‘রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪’ প্রণয়ন, ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ (এফটিএ) সম্পাদনে তিনটি সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা পরিচালনা ও ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের ছয়টি অবস্থানপত্র প্রণয়ন করা হবে। এছাড়াও রপ্তানি বাড়াতে ‘বাংলাদেশ রিজিওন্যাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১’-এর আওতায় সার্ভে পরিচালনা; দ্বি-পাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহু পাক্ষিক বাণিজ্য সংক্রান্ত ট্রেড নেগোসিয়েশনে অংশগ্রহণ; বিদেশে নতুন বাণিজ্যিক মিশন চালু এবং মিশনের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্যিক মিশন পরিদর্শনর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, রপ্তানি বাড়াতে গত ডিসেম্বরে ভুটান-এর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক ‘অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি’ (পিটিএ) সই করা হয়েছে এবং সরকারের যথাযথ উদ্যোগের ফলে ২০২০ সালের জুলাই থেকে চীনের বাজারে ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্যে (৯৭%) শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়া গেছে। এছাড়া ৯টি দেশের সঙ্গে ‘এফটিএ’ সম্পাদনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে সরকার। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে- তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, মালি, সেনেগাল, সিওরালিওন, মিয়ানমার ও মরিশাস।
এদিকে শুধু রপ্তানি নয়, সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সফলতা নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুললেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত এপিএ-তে অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মূল্য ৯৯ শতাংশ স্থিতিশীল বলে দাবি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রসঙ্গত, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল, ভোজ্য তেল ও পিঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। এসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে চলতি অর্থবছরে ৭২০টি বাজার মনিটিরিং অভিযান পরিচালনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া ‘ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রয়, ভোক্তার স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চিত করতে দেশের সকল জেলা থেকে বাজার পরিস্থিতি বিষয়ক প্রতিবেদন সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।