মজুদ পর্যাপ্ত তবু আরও এক মাস পেঁয়াজের দাম বাড়তির আশঙ্কা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
সোহেল রহমান : বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে, যা দিয়ে আড়াই থেকে তিন মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কিন্তু তা সত্ত্বেও আরও এক মাস পেঁয়াজের মূল্য বেশি থাকতে পারে। ভারতের ব্যাঙ্গালুরু-তে অতি বৃষ্টির কারণে সেখানকার বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। পেঁয়াজের বাজার দর স্বাভাবিক হওয়ার জন্য ভোক্তাদের ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এর বাইরে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আগামী চার মাস পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ (এনবিআর)-কে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার সচিবালয়ে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সভা’ শেষে এক ব্রিফিং-এ বাণিজ্যমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি এবং বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এসব কথা জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে।
তিনি বলেন, আমরা চারদিক থেকে চেষ্টা করছি দাম যতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক মাস বাড়তি দাম থাকার কথা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিন্তু দেশে বর্তমানে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত আছে, যা দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে। তারপরও পেঁয়াজের আমদানি সহজ ও দ্রত করার জন্য ইতিমধ্যে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং বন্দরে দ্রুত পেঁয়াজ খালাসের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এনবিআর-কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পেঁয়াজ আমাদনির অনুমতি পত্র দ্রুত প্রদানের জন্য কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। টিসিবি’র মাধ্যমে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে, সাশ্রয়ী মূলে তা বিক্রয় অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গক্রমে, বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার অভিযান জোরদার করেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে বাজার তদারকি বাড়িয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে কোন ধরনের কারসাজি করা হলে বা কৃত্রিম উপায়ে সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, শুধু পেঁয়াজ নয়, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর সব ধরনের শুল্ক আপাতত স্থগিত রাখতে এনবিআর-কে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিনি আমদানিতে এসডি ও অগ্রিম শুল্ক রয়েছে।
দুটোই প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ও অগ্রিম শুল্ক রয়েছে, এক্ষেত্রে অগ্রিম শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। পেঁয়াজের শুল্ক চার মাসের জন্য প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি। গত বছর চার মাসের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এনবিআরের কর্মকর্তাদের ইতিবাচক মনে হয়েছে। আশা করছি এবারও তিন মাসের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে।
পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু ভারতের দাম বাড়ার জন্য এবং কিছু দাম বাড়ার আশঙ্কা থেকে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন। আমাদের চেষ্টা থাকবে যৌক্তিক মূল্য যতটুকু বাড়া দরকার ততটুকুই যেন বাড়ে, এর মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ থাকে। আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি এখন যেমন আছে এর চেয়ে আর খারাপ হবে না। এখনকার এই নাজুক পরিস্থিতি হয়তো আগামী এক মাস ধরে চলবে।