বাজেট ঘাটতি মেটাতে লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার
সোহেল রহমান : সমাপ্ত অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার। সে হিসাবে বাজেট ঘাটতির ২৫ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়েছে সরকারের। তবে বাজেট ঘাটতি পূরণে কম ঋণ নিলেও সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক ঋণ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক-ব্যবস্থা ও বৈদেশিক উৎস থেকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম ঋণ নেয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা এবং অনুদানসহ ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে সরকার মোট ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৭ শতাংশ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ৩৩ শতাংশ অর্থ ঋণ নেয়া হয়েছে।
বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের মাসওয়ারি ঋণ গ্রহণের চিত্র পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগ বলেছে, সরকারের ঋণ গ্রহণের মাসিক গড় হিসাবের তুলনায় অর্থবছরের প্রথম ও শেষ মাসে (জুলাই ও জুন) নগদ অর্থের চাপে থাকে সরকার। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে বিগত অর্থবছরের শেষ মাসের (জুন) চেকগুলো নগদায়নের কারণে আর্থিক চাপে থাকে সরকার।
অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, বাজেট ঘাটতি পূরণে গত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ৯২ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত (সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য) থেকে ৫৭ শতাংশ এবং ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ৪৩ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এটি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ১৩৮ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।
এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে ঋণ গ্রহণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ নেয়া হয়েছে ৬ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ১৩৩ শতাংশ।
অর্থ বিভাগ বলছে, সঞ্চয়পত্রের ব্যাপক বিক্রির কারণে এ খাতে সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। আর এ খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অধিক ঋণ নেয়ায় ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম।
সমাপ্ত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মোট ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৫ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, সমাপ্ত অর্থবছরে বৈদেশিক উৎস থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ হচ্ছে ৪৫ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ জানায়, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বি-পাক্ষিক উৎস থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়েছে এবং বহুপক্ষীয় ঋণ গ্রহণ কমেছে। এ হার যথাক্রমে ৬৪ শতাংশ ও ৩৬ শতাংশ। দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির আওতায় সরকারের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন থাকায় সরকারের দ্বি-পাক্ষিক ঋণ বেড়েছে।