পাকিস্তানে এক ডলারের বিপরীতে মিলছে ১৭১ রুপি
রাশিদ রিয়াজ : পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা বলছেন আন্তর্জাতিক বাজারে ভোক্তাপণ্য মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের চাহিদা বেড়েছে এবং ডলারের বিপরীতে রুপি চলতি বছরে মান হারিয়েছে ৮.৫৭ শতাংশ বা সাড়ে ১৩ রুপি। আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলারের তুলনায় পাকিস্তানের ইতিহাসে রুপির এত বিশাল অবমূল্যায়ন ঘটল। সোমবার ১ ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপি পাওয়া যায় ১৭০.৭৪ রুপি। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের বিপরীতে রুপির অবমূল্যায় ঘটেছে ১.৭ শতাংশ বা ২.৮৮ রুপি।
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান বলছে গত বছর আগস্ট থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৩ মাসে ডলারের বিপরীতে রুপি অবমূল্যায়ন হয়ে দাঁড়ায় ১৬৮.৪৩ রুপিতে। পাক-কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির গবেষণা প্রধান সামিউল্লাহ তারিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানান, আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের চাহিদা বেড়েছে খাদ্যপণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায়।
এছাড়া জালানি তেল, কয়লা ও এলএনজি আমদানি বাবদ পাকিস্তানকে যথেষ্ট পরিমান ডলার খরচ করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৩.৪৮ ডলার।
এছাড়া গম, চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক আকারে। আরিফ হাবিব লিমিটেডের হেড অব রিসার্চ তাহির আব্বাস বলেন, জালানি আমদানি করতেই পাকিস্তানকে আমদানি ব্যয়ের ২৫ শতাংশ চলে যাচ্ছে। তবে আইএমএফ’র কাছ থেকে খুব শীঘ্রই ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়া গেলে তাতে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির মূল্য মূল্যায়িত হয়ে ১৬৮ থেকে ১৬৯ রুপিতে পৌঁছাতে পারে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া বিশ^ ব্যাংক ও এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক বিভিন্ন প্রকল্পে অতিরিক্ত আরো ১.৪ বিলিয়ন ডলার দেবে। এছাড়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন শুরু হলে আইএমএফ’র আরো ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া যাবে। এসব ঋণ পেলে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির ওপর চাপ কমে আসবে। তারিক বলেন, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডলারের সরবরাহ রফতানি ও রেমিটেন্স বাবদ যতটা আসা প্রয়োজন তা সম্ভব হচ্ছে না।
এর ফলে ডলারের চাহিদা বাড়ছে এবং রুপির ওপর চাপও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডলারের বাড়তি যোগান দিয়ে রুপির ওপর চাপ হ্রাস করাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ডলারের পর্যাপ্ত মজুদ নেই। তাহির আব্বাসের মতে, বাজারের গুজব থেকে বোঝা যায় যে আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি আবার শুরু হতে চলেছে কারণ পাকিস্তান দুই দফায় বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির দাবি মেনে নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, চলতি অর্থবছরে দেশটির কর সংগ্রহ শক্তিশালী হয়েছে। আর আইএমএফ’র ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে পাকিস্তানে ডলারের প্রবাহ বাড়বে এবং রুপির ওপর স্বাভাবিকভাবেই চাপ কমবে। একই সঙ্গে রুপির উপর চাপ কমাতে পাকিস্তান সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপগুলি আগামী নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর থেকে ফল দিতে শুরু করবে এবং ডলারের চাহিদা কমে যাবে এমন মনে করছেন তাহির আব্বাস।
এর আগে, পাকিস্তান সরকার বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য আগাম ১০০% আমদানি শুল্ক জমা দিতে, আমদানির উপর নিয়ন্ত্রক শুল্ক বৃদ্ধি, আমদানিকারকদের কাছ থেকে ডলারের চাহিদা এবং রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে এবং গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থায়ন কঠোর করেছে। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আগামী তিন মাসের মধ্যে ডলারের বিপরীতে রুপির ওপর চাপ হ্রাস পাবে বলে দেশটির অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন। এছাড়া পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলছে। এই ব্যবস্থাগুলি পাকিস্তানে ডলারের চাহিদা কমিয়ে দেবে এবং রুপিকে সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও