বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে এক ধাপ পিছিয়েও ভারত-পাকিস্তান থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ
মো. আখতারুজ্জামান : ১১৬টি দেশের মধ্যে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। সূচকে মোট ১০০ স্কোরের (এখানে স্কোর যত কমবে ততো ভালো) মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক এক। যেখানে প্রতিবেশি দেশ ভারত ২৭ দশমিক ৫ নিয়ে ১০১তম এবং ২৪ দশমিক ৭ স্কোর নিয়ে ৯২তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। ১৯ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে ৭৬তম অবস্থানে নেপাল, অর্থাৎ এবারের সূচকে বাংলাদেশ ও নেপাল সমঅবস্থানে রয়েছে। তবে এবারের সূচকে এগিয়ে আছে মিয়ানমার। তালিকায় দেশটির অবস্থান ৭১তম, স্কোর ১৭ দশমিক ৫।
বৃহস্পতিবার কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে যৌথভাবে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (জিএইচআই) ২০২১ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন মতে, ক্ষুধা সূচকে এবছর বাংলাদেশের এক ধাপ পিছিয়েছে। ২০২০ সালে ১০৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম। সেই হিসেব এক পয়েন্ট পিছিয়েছে বাংলাদেশ। সেসময় পাকিস্তানের অবস্থান ছিল ৮৮তম এবং ভারতের অবস্থান ছিল ৯৪তম।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে বাংলাদেশের অনেক লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। সেইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে খাদ্যজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। করোনাকালীন অনেক লোক কর্মসংস্থান হারিয়েছে। ২০২০ সালে সেখানে আমাদের দেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিলো ২০ শতাংশের নিচে। এখন সেই হার ৩০ শতাংশে চলে গেছে বলা হচ্ছে। এসব চিত্রই বলে দিচ্ছে যে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য কেনার সামর্থ নেই। ফলে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে আমরা পিছিয়ে আছি। যদিও বলা হচ্ছে ভারত-পাকিন্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। কিন্তু চিন্তা করতে হবে আমাদের আগের অবস্থান কি ছিলো।
তিনি বলেন, এখন আমাদেরকে লোকজনের কর্মসংস্থান তৈরিতে বেশি মনোযোগী হতে হবে। অন্যথায় দারিদ্র্যের যে চিত্র তা আরও অবনতি হতেই থাকবে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক বছর ও দশকগুলোতে বেশ কিছু দেশের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষুধা নিবারণের সাফল্যের গল্প আছে। স্কোর অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১৪টি দেশ ২৫ শতাংশ বা তারও বেশি ক্ষুধা হ্রাস করতে পেরেছে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথাও বলা যায়।
বাংলাদেশ ২০১২ সাল থেকে জিএইচআই স্কোরে দারুণ অগ্রগতি করছে। সেসময় স্কোরে ২৮ দশমিক ৬ পয়েন্ট নিয়ে গুরুতর পর্যায়ে থাকলেও ২০২১ সালে এ স্কোর ১৯ দশমিক ১ পয়েন্টে কমে সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। অর্থাৎ, গত ৯ বছরে ক্ষুধা নিবারণে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। স্কোর অনুযায়ী বাংলাদেশে ক্ষুধার মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৪, যা ক্ষুধার গুরুতর মাত্রাকে নির্দেশ করে। ২০০৬ সালে স্কোরে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়, স্কোর দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৯। ২০১২ সালের স্কোরে বাংলাদেশ আরও উন্নতি করে, স্কোর হয় ২৮ দশমিক ৬। চলতি বছরও বাংলাদেশের স্কোরে অগ্রগতি এসেছে। ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ১।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে কারও স্কোর শূন্য হলে বুঝতে হবে, সেখানে ক্ষুধা নেই। আর স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার হিসাব করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয়- যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এ সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।