বিশে^ ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ বৃদ্ধির রেকর্ড
রাশিদ রিয়াজ : আইএমএফ বলছে এ ঋণের পরিমান বিশ^ জিডিপি’র ৯৭.৮ শতাংশ। যা গত বছরের চেয়ে ০.৮ শতাংশ কম। আগামী বছর এ ঋণের পরিমান আরো ১ শতাংশ কমবে বলে আভাস দিয়েছে আইএমএফ।
আইএমএফ’র এর রিপোর্টে আরো বলা হয় পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ২০২৬ সাল নাগাদ এ ঋণ আরো ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। গত ৪০ বছরের মধ্যে এবছর খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে।
প্রাথমিক অনুমান অনুসারে, গত বছর বিভিন্ন দেশের সরকার, ননফিনান্সিয়াল কর্পোরেশন এবং পরিবারিক ঋণের পরিমান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৬ ট্রিলিয়ন ডলার যা ২০১৯ সালে ছিল ২৭ ট্রিলিয়ন। এটি রেকর্ড পরিমান ঋণের বৃদ্ধি। ২০০৮-০৯ সালে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের বছরগুলোতে ঋণ বেড়েছিল ২০ ট্রিলিয়ন ডলার। আরটি
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ঋণের ৯০ শতাংশই ছিল উন্নত অর্থনীতির দেশ চীনের, বাকি ৭ শতাংশ ঋণ ছিল উদীয়মান বাজার এবং নি¤œ আয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোর। আইএমএফ এও বলছে এ বছর শেষ নাগাদ ৬৫ থেকে ৭৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাবে।
বিশে^র সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে যে পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে সরকারি ঋণের পরিমাণ দেশটির পুরো অর্থনীতির আকারকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন নীতিনির্ধারকরা। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস ইতিমধ্যে সতর্ক করছে চলতি বছরে দেশটির সরকার যে বাজেট ঘাটতির মধ্য দিয়ে যাবে, তা ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান-পরবর্তী সর্বোচ্চ হতে পারে। আগামী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণ দেশটির পুরো অর্থনীতির আকারের সমান হতে পারে। ১৯৪৬ সালের পর প্রথমবারের মতো এত বিশালাকার ঋণের ফাঁদে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাওয়া মার্কিন পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছু অর্থনীতিবিদ আবার বলছেন, সরকারের ঋণের পরিমাণ তত বেশি নয়। বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রমে গতি নিয়ে আসতে সরকার থেকে আরো ঋণ গ্রহণ করতে মুখিয়ে রয়েছে।
সিবিওর পূর্বাভাস, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া চলতি অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ব্যয় ও সংগৃহীত করের পার্থক্য বা বাজেট ঘাটতি ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে। যা দেশটির জিডিপি’র ১৬ শতাংশ। গত ৭৫ বছরের মধ্যে এত বড় বাজেট ঘাটতি দেখেনি মার্কিন অর্থনীতি। আগামী বছর দেশটির এ ঘাটতি জিডিপির ১০০ শতাংশে দাঁড়াবে। ২০২৩ সালে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে, যা জিডিপির ১০৭ শতাংশ হতে পারে। এতে ১৯৪৬ সালে করা জিডিপির ১০৬ শতাংশ ঘাটতির রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
গত বছর মার্চে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই মার্কিন সরকার গভীর ঋণে ছিল। তার পরে মহামারীটি আসায় শাটডাউনের ফলে অর্থনীতিতে দ্রুত পতন শুরু হয়। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে জিডিপি ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ পতন হয়, যা ১৯৪৭ সালের পর রেকর্ড সর্বোচ্চ প্রান্তিকীয় পতন। মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে রেকর্ড ২ কোটি ২০ লাখ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। এ সংকটে মার্কিন নাগরিকদের সহায়তায় গত বছর মার্চে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি সহায়তা বিল পাস করেছিল কংগ্রেস।
অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে প্যাকেজটি মার্কিনীদের এককালীন ১ হাজার ২০০ ডলারের চেক প্রেরণ করেছিল এবং সাময়িক বেকারদের রাজ্যের বেকার সুবিধার বাইরেও সপ্তাহে সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দ্রুতগতিতে দেশটির ঋণ বাড়তে থাকে। ১৯৬১ সালের মধ্যে তা অবশ্য জিডিপির ৪৪ শতাংশে নেমে আসে। সেই সাফল্যের পেছনে ছিল একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, যা সরকারকে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব প্রদান করে এবং সরকারি ঋণ কমিয়ে ফেলে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ করে। আর্থিক ব্যবস্থাটি সরকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। নীতিনির্ধারকরা সুদহার কৃত্রিমভাবে কম রাখার এবং ঋণ পরিশোধের ব্যয় হ্রাস করার অনুমতি দেন।
তবে মার্কিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন কিছুটা আলাদা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বছরগুলোয় অর্থনীতি যত দ্রুত এগিয়েছিল, বর্তমানে ওই গতিতে প্রবৃদ্ধি হয় না। ২০১০ সাল থেকে দেশটির গড়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ১৯৮০-এর দশকের পরেও সরকার সুদহার নিয়ন্ত্রণ করেনি। তবুও ফেডারেল রিজার্ভ প্রচুর পরিমাণে ট্রেজারি ঋণ কিনে সরকারি ঋণের হারকে অতি নিচে রাখতে সহায়তা করছে। অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করেছেন যে সরকার অত্যধিক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। সরকার যখন অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করে তখন এ যুক্তি দেয়া হয়, এটি ঋণের জন্য ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে এবং এর মাধ্যমে সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু অর্থনীতিবিদ ও বাজেট পর্যবেক্ষক এখনো সতর্ক করেছেন যে এমন দিন আসবে, সরকার তার ব্যয় কমাবে এবং কর বাড়াবে বা দুটোই করবে।