এবার রংপুরের পীরগঞ্জে বাড়িঘরে আগুন লুটপাট, গ্রেপ্তার ৪২
আফরোজা সরকার : রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশকিছু বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
রোববার রাত ১০টার দিকে রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া-বটতলা ও বড়করিমপুর গ্রামে এ তা-ব চালিয়েছে হামলাকারীরা।
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে চালানো এ হামলায় ২০-২৫টি পরিবারের বাড়িঘর আগুনে পুড়ে গেছে। গবাদিপশু, নগদ টাকা, খাদ্যসামগ্রী ও অলংকারসহ অনেক মালামাল লুট হয়েছে বলে দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
রোববার রাত ১০টা থেকে এ তা-বের খবর পেয়ে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দমকলের ৫টি ইউনিট যখন একদিকে আগুন নেভানোর জন্য মরিয়া, তখন আরেক দিকে আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন হামলাকারীরা। চোখের সামনে দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়া আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যায় বেশকিছু ঘরবাড়ি ও দোকান। গবাদি পশুগুলো লুট হয়ে যাওয়ায় আহাজারি আর আর্তচিৎকারে ভারি হতে থাকে রাত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক যুবক ধর্ম অবমাননাকর ছবি ফেসবুকে পোস্ট বা কমেন্ট করেছেন- এমন অভিযোগে ঐ যুবকের বাড়ি ঘিরে ফেলে উত্তেজনা সৃষ্টিকারীরা। এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। এরপর ভয়ে ঐ যুবক সপরিবারে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে ঐ যুবকের বাড়িতে নিরাপত্তা জোরদার করে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ সুপার, র্যাব-১৩-এর অধিনায়ক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। রাত ১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে রাতভর উপস্থিত থাকেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ। পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় জানান, রোববার রাতে বটেরবাজার মাঝিপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরো সময় লাগবে।
জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, যার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বেশকিছু হিন্দুদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেয় হামলাকারীরা। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসনসহ সরকার দলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তবে কারো নাম পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। এদিকে এ ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে রংপুর নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ।