ঋণ নয়, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে অনুদানভিত্তিক এককালীন মূলধন সহায়তার পক্ষে মত বিশেষজ্ঞদের
ভূঁইয়া আশিক রহমান : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধাগুলো কীভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছানো যায়, সেই চেষ্টা ও পথ বের করতে হবে। তবে ব্যাংকগুলো খুব একটা আগ্রহী নয় তাদের ব্যাপারে। কারণ ঋণ দেওয়ার জন্য যে কাগজপত্র বা ইনফরমেশন দরকার, তা অনেকেই দিতে পারেন না। প্রণোদনা প্যাকেজ সুবিধা পাওয়ার পথে বাধাগুলো আছে, তা দূর করা দরকার।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প টিকিয়ে রাখা জরুরি। কারণ জাতীয় আয়ে তাদের অনেক অবদান আছে। শ্রমঘন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
বিশ^ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িকভাবে সঙ্কটাপন্ন। তাদের টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা দরকার। ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলো, সেটা ব্যাংকভিত্তিক বা সরাসরি অর্থ সহায়তাও ছিলো। ছোট ছোট করে হলেও অনেক ধরনের আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু যাদের অর্থ সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে সময়মতো পৌঁছাতে পারে না। ঋণভিত্তিক প্রণোদনা দিয়ে সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
অনেকেই এ ধরনের সংকটকালীন অবস্থায় ঋণের ফাঁদে পড়তে চান না। অনেকের সঞ্চয় খুব একটা নেই, যা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে নেবেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে ৪-৫ শতাংশ সুদের সস্তা ঋণও নেওয়া সম্ভব হবে না তাদের পক্ষে। কারণ সুদ-আসল পরিশোধ করতে পারবেন কিনা, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। পরিশোধ করতে না পারলে ঋণের ফাঁদে পড়ে যাবেন। ফলে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃতই সংকটে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া দরকার।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, নন-রেজিস্টার্ড, ইনফরমাল সেক্টরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কাজ করে। তারা যদি ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে দেশে অর্থনৈতিক ঝুঁকিও বাড়বে। দেশে এমনিতেই শিক্ষিত বেকার সমস্যা প্রকট। ইনফরমাল সেক্টর থেকেও যদি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে, তাহলে তারা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এতেই বোঝা যায়, ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো টিকিয়ে রাখার গুরুত্ব কতোটুকু।
আমাদের শক্তিশালী কোনো ডেটাবেজ নেই। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার কারণে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরকার চিহ্নিত করতে পারে না। এতে প্রণোদনার সুবিধাও পৌঁছানো যায় না। যারা করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত, ব্যবসা বন্ধ আছে, চালু করতে পারছেন নাÑতারা চরম বিপদে আছেন। তাদের জন্য কী করা যায়Ñ ভাবা দরকার।