প্রথম পাতা • লিড ১ • শেষ পাতা
ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার গত সপ্তাহ চার কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে তিন কার্যদিবসই দর পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। যার কারণে পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। সপ্তাহটিতে উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচকই কমেছে। একই সাথে কমেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনি দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে বিনিয়োগকারীরা বাজার মূলধন হারিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে।
গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৮০ হাজার ১১২ কোটি ৮১ লাখ ৩ হাজার ৪০ টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫১ কোটি ২৪ লাখ ৬১ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীরা ১০ হাজার ২৬১ কোটি ৫৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় হাজার ৪৩ কোটি ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৩৫ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি ১১ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৩ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন তিন হাজার ১৯ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ২১৮ টাকা বা ৩৩ শতাংশ কমেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬৭.০৪ পয়েন্ট বা ২.৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৭৬.২৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪৯.২৭ পয়েন্ট বা ৩.১৪ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৯.৮০ পয়েন্ট বা ০.৭৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৫১৮.১৬ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৬৯৯.৩৪ পয়েন্টে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৭৮টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির বা ৮.২০ শতাংশের, কমেছে ৩৩৮টির বা ৮৯.৪২ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টির বা ২.৩৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২২৮ কোটি ৯৮ লাখ ১২ হাজার ২৪৮ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার ০১৩ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ৯৬ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৫ টাকা বা ৩০ শতাংশ কমেছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪২৩.৩৭ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৯৩.৩৫ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ২৪৯.০৮ পয়েন্ট বা ১.৯৬ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ২৮৬.২০ পয়েন্ট বা ১.৮৯ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ১৫.৬৮ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ এবং সিএসআই ৫০.৯৮ পয়েন্ট বা ৩.৭৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২ হাজার ৪৩৩.৮৯ পয়েন্টে, ১৪ হাজার ৭৯১.৩০ পয়েন্টে, ১ হাজার ৫৫৮.৬০ পয়েন্টে এবং এক হাজার ৩০০.৯৪ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৩৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪১টির বা ১২.২৪ শতাংশের দর বেড়েছে, ২৮৬টির বা ৮৫.৩৭ শতাংশের কমেছে এবং ৮টির বা ২.৩৯ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এবিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, সার্বিকভাবে বাজারে এখন এমন দরপতনের বস্তুনিষ্ঠ কোনো কারণ দেখছি না। এভাবে দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এই দরপতনের আগে বাজার কিন্তু অনেকটাই উঠেছে। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ হয়তো এখন প্রফিট টেকিং করছেন। ফলে বিক্রির চাপ বাড়ায় দরপতন হচ্ছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার খুবই সেনসিটিভ। যেকোন বিষয় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর কোনো কারণে বাজারে একটু দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়।
এবিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, শেয়ারবাজার ভালোর দিকেই যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করে আবার পতন ধারায় চলে যাচ্ছে।
এটা কোন কু চক্র মহল শেয়ারবাজার ধস নামাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকার দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। রাজ্জাক আরও বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারা বাজার দরপতন ঘটাচ্ছে। রাজ্জাক বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর সম্প্রতি শেয়ারবাজার অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এতে বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি। কিন্তু গত কয়েকদিনের দরপতনে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছি।