ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে যেকোনো মূল্যস্ফীতিই ক্ষতিকর
আমিরুল ইসলাম : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, যা আগস্টে ছিলো ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশে দাঁড়ানোর অর্থ হলো গত বছরের সেপ্টেম্বরে যে পণ্যটি ১০০ টাকায় কেনা যেতো, সেটি কিনতে এ বছরের সেপ্টেম্বরে লেগেছে ১০৫ টাকা ৫৯ পয়সা। ২১ অক্টোবর ওয়েবসাইটে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে দেখা যায়, শহর ও গ্রাম দুই জায়গাতেই খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। নিত্যপণ্যের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের পেছনে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে মানুষের। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন, আসবাব ও বিনোদনের পেছনে খরচ বেড়েছে।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এতো বেশি মূল্যস্ফীতি জনগণ সামাল দিতে পারবে কিনা জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ফীতি নির্ভর করে চাহিদা এবং সরবরাহের ওপরে। করোনার কারণে মানুষের আয় কমার সঙ্গে চাহিদা কমেছে এবং সরবরাহও কমেছে। বর্তমান মূল্যস্ফীতিকে মোটামুটি স্থিতিশীলই বলা যায়। এটা নিয়ে উদ্বেগের তেমন কোনো কারণ নেই। বাজারে বেশ কিছু পণ্যদ্রব্যের মূল্য বেশি হলেও সার্বিক মূল্যস্ফীতি খুব বেশি নয়। যে কোনো মূল্যস্ফীতি হলেই নি¤œবিত্তের মানুষের ওপর চাপ পড়ে। সাধারণ মানুষের ওপর কিছুটা চাপ নিশ্চয়ই পড়বে। বাজারের সকল পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটা চাহিদা এবং সরবরাহের ওপর নির্ভর করে।
বিসিকের সাবেক পরিচালক আবু তাহের খান বলেন, ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে যে কোনো মূল্যস্ফীতিই ক্ষতিকর। কোভিডকালীন সময়ে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার অন্য দেশের তুলনায় কিছুটা ভালো। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কোভিডের কারণে কমে গেছে। ফলে যে কোনো ধরনের মূল্যস্ফীতিই জনগণের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। পৃথিবীর বহু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ খারাপ। করোনার কারণে উৎপাদন কমে গেছে কিনা এ রকম পরিসংখ্যান জানা যায় না। সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছু জায়গায় গলদ আছে বলে পণ্যের দাম বাড়ছে।
বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে আমাদের দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সন্দেহ নেই যে, এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নীতি নির্ধারকরা ব্যবসায়ীদের পক্ষাবলম্বন করায় পণ্যদ্রব্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। নীতি নির্ধারকরা সাধারণ মানুষের দিকে তাকান না। ব্যবসায়ীদের নীতি নির্ধারকরা নানাভাবে অন্যায্য সহযোগিতা করছেন।