গ্রামীণ আবাসন খাত উন্নয়নে বেশি মনোযোগ দিয়েছি : বিএইচবিএফসি এমডি
মো. আখতারুজ্জামান : দেশের আবাসন খাতের উন্নয়নে ঋণ প্রদানকারি বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি) শুরু থেকে কাজ করছে আসছে। আবাসন খাতে বিনিয়োগ ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় বিএইচবিএফসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিমের সঙ্গে। বিএইচবিএফসি’র এমডি পদে যোগদানের পূর্বে তিনি সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালে বিএইচবিএফসিতে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদে যোগদানের মাধ্যমে চাকরীজীবন শুরু করেছিলেন।
বিএইচবিএফসি’র এমডি আফজাল করিম বলেন, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি) বিগত অর্থবছরে (২০২০-২১) সংস্থাটির ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আমরা অধিকাংশ সূচকে বিগত যে কোন বছর অপেক্ষা বেশি সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি।
আফজাল করিম বলেন, দেশের আবাসন খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিএইচবিএফসি সরকারের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা আবাসন খাতে শুধুমাত্রা অর্থায়ন করছে। আবাসখাতে শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে বিএইচবিএফসি প্রতিষ্ঠানকাল থেকে কাজ করে আসছে। অর্থাৎ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যে রাজুক, সিটিকরপোশনে, পৌরসভা, ইউপি পরিষদে বাসা-বাড়ি তৈরি বিষয়ে আমাদের গ্রাহকদের ডিজাইন নিয়ে আসতে হয়। ঋণ পেতে গ্রাহকদের বেশ কিছু কাগজপত্রের মধ্যে এটাও থাকে। আর এভাবে আবাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আসতে আমাদের প্রতিষ্ঠান মূল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এটার মাধ্যমে সরকারের পরিকল্পিত আবাসনের যে চিন্তাধারা তারা বাস্তবয়নে কাজ করছে বিএইচবিএফসি।
তিনি বলেন, করোনা মহামারীর ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৮০০ জন ঋণ গ্রহিতাকে ঋণ মঞ্জুর করেছি। যার পরিমাণ ৬১৯ কোটি টাকা ঋণের ৭০ শতাংশ ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরের বাহিরে। আগে আমরা মেট্রো এলাকার মধ্যেই কার্যক্রম পরিচালনা করতাম। সেই অবস্থান থেকেই বেড়িয়ে এসেছি। ঢাকা চট্টগ্রামের লোকদের জন্য অনেক অপশন রয়েছে যেটা গ্রাম এলাকার লোকদের নেই। বর্তমান সরকারে শ্লোগান হচ্ছে আমরা গ্রাম আমার শহর তার সঙ্গে তালমিলিয়ে আমরা নগরায়নের যে সুযোগ সুবিধা রয়েছে এসব এখন গ্রাম এলাকায় দেয়ার বিষয়ে মনোযোগী হয়েছি।
বিএইচবিএফসি’র এমডি বলেন, করোনা মহামারী এই সময়ে কোনো গ্রাহকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করিনি। তবে প্রত্যেক গ্রাহকের সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ করেছি। মোবাইলে এসএমএস’র মাধ্যমে, নোটিশে মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে ভার্চুয়ালিভাবে যোগাযোগ করে জানিয়ে দিয়েছে যে আপনার অভারডিউ বা খেলাপী কিস্তি রয়েছে। সর্বোশেষ রেড নোটিশ দিয়েছি। কারণ রং-এর একটি প্রভাব রয়েছে। এতে করে ভালো কাজও দিয়ে থাকে। যাদের খেলাপী কিস্তির পরিমাণ বেশি এমন প্রায় ৯৫০ জন গ্রাহককে লাল নোটিশ পেয়ে দ্রুত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা তাদের কথা শুনেছি। সেই আলোকে সমাধান দিয়েছি। এতে করে ভালো সারা পেয়েছি। ফলে মহামারীতেও খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিলো না বললেই চলে।
আফজাল করিম বলেন, ঋণ দেয়ার আগে আমরা যেসব কাগজের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি তা হচ্ছে জমিরা মালিকানা সংক্রান্ত কাগজ, এই কাগজের বিপরিধে কোনো ব্যাংক ঋণ আছে কি না সেই কাগজ, মাটির ধারণ ক্ষমতার রিপোর্ট এবং বাড়ি জিজাইনে অনুমোদনের কাগজ। আমরা চেষ্টা করে থাকি গ্রাহক যাতে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে তার জমিতে কোনো ধরণে সমস্যা নেই। গ্রাহদের যে ঋণ মঞ্জুরী করা হয় তা কয়েকটি কিস্তিতে দেয়া হয়ে থাকে। যাতে করে ঋণের টাক সঠিকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এই টাকা কখনও চার কিস্তিতে বা পাঁচ কিস্তিতে দেয়া হয়। সেইসঙ্গে আমাদের কর্মকর্তারা পরিদর্শ করে থাকেন আগে যে টাকা দেয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে ব্যবহা হয়েছে কিনা। এতে করে প্রাপ্ত ঋণের টাকা সঠিক ভাবে ব্যবহার নিশ্চিত হয়। গ্রাহক অন্য কোথাও এই অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পায় না।
জানা যায়, সারাদেশে বিএইচবিএফসি’র ৬১ শাখা, ১৪ রিজিওনাল ও ১০ জোনাল অফিস রয়েছে।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে শ্রেণিকৃত ১৪৩ কোটি ৩০ লাখ ও অশ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ ৪৭৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে শ্রেণিকৃত ৪০ কোটি ও অশ্রেণিকৃত ঋণ আদায় হয়েছে ৫০৯ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সর্বমোট ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪৮৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সর্বমোট ঋণ আদায় পূর্ববর্তী বছর অপেক্ষা ৬৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা বেশি। ঋণ মঞ্জুরী, ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের এ অর্জন প্রতিষ্ঠানটির জন্য এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এছাড়া খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আদালতে পরিচালিত মামলা নিষ্পত্তি এবং সরকারি বানিজ্যিক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সফলতা বিগত অর্থবছর অপেক্ষা বেশি। পূর্ববর্তী বছর ১০ বাণিজ্যিক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছিল।