আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে ‘ঝরে পড়া’ শিশুর সংখ্যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে ১০-১২% মেয়েশিশু বাল্য বিবাহের শিকার : ড. দেবপ্রিয়
সোহেল রহমান : অতিমারির ফলে গতবছরের মার্চ মাস থেকে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত আকারে স্কুলগুলো খোলা হয়েছে। কিন্ত স্কুল খোলার পর দেখা যাচ্ছে ‘ঝরে পড়া’ শিশুর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও জরিপ অনুযায়ী এই সমস্যার মূল কারণ বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম। করোনা কালে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিশু মূলত দরিদ্রতা এবং অন্যান্য সামাজিক কারণে বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমের শিকার হয়েছে যা প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে অধিকতর তীব্র। এমতাবস্থায় ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষাক্রমে যুক্ত করতে স্কুল-ভিত্তিক তথ্য ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
সোমবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)-এর যৌথ উদ্যোগে অতিমারি-উত্তর শিশুদের স্কুলে ফেরা শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব কথা বলা হয়।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্যে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রায় ১০-১২% মেয়ে শিশু বাল্য বিবাহের শিকার। এটি যতটা না অর্থনৈতিক, তার থেকেও অনেক বেশি সামাজিক সংকট। অভিঘাতের ফলে শিশুদের পরিবারে বিভিন্ন ধরণের ব্যয়ের ক্ষেত্রে সঙ্কোচন হয়েছে। দেখা গেছে কোনো পরিবার আমিষের পরিমাণ কমিয়েছে, কখনো খাবারের পদের পরিমাণ কমিয়েছে, আবার কখনো একবেলা খাবারও কমিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত ১৫-২০ শতাংশ পরিবারে শিশু খাদ্যের ক্ষেত্রেও ব্যয় সঙ্কোচন করতে হয়েছে, যা শিশুদের পুষ্টিহীনতা অনেকাংশে বাড়িয়েছে।
সংলাপে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বলেন, অতিমারির কারণে শিশুশ্রম ও অল্প পয়সায় শিশুশ্রমিক নিয়োগ বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ ৯ম ও ১০ম শ্রেণির মেয়েরা স্কুলে ফিরছে না। কারণ তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। লক-ডাউনকালীন সময়ে ২১টি জেলায় পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সের প্রায় ১৩ হাজার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, যা আশংকাজনক। যৌন নির্যাতন ও শারীরিক সহিংসতাও এর মধ্যে বেড়েছে।
বাল্য বিবাহ ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, পাশাপাশি সাহায্যের জন্য হেল্প-লাইন নম্বার বাড়ানো এবং এই সংকটকালীন সময়ে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ রোধে জাতীয় ক্যাম্পেইন এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতারও প্রয়োজন রয়েছে।
আইএলও’র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মুনিরা সুলতানা বলেন, গত দুই বছরে শিশুশ্রম বেড়েছে এবং বৈশ্বিকভাবে এই সংখ্যা ৮৬ মিলিয়নেও পৌঁছাতে পারে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর-এর যুগ্ম-মহাপরিদর্শক (স্বাস্থ্য শাখা) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসডিজিকে লক্ষ্য করে শিশুশ্রম নিরসনের জন্য একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হচ্ছে।
সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মোট ১৫টি সামাজিক সেক্টর নির্ভর মন্ত্রণালয় আছে যাদের বাজেটের শতকরা ২০ ভাগ শিশুদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এই বাজেট কীভাবে করা হচ্ছে এবং এর বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তার সঠিক ফলো-আপ করলে সমস্যা অনেকটা নিরসন করা সম্ভব।