জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব বিপিসি’র
সোহেল রহমান : করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেড়ে যাওয়ায় দেশে অভ্যন্তরীণ জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। জ্বালানির বর্ধিত চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২২ সালের পঞ্জিকা বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) জন্য পাঁচ ক্যাটাগরির মোট ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র আগামী সভায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত: চলতি ২০২১ সালের পঞ্জিকা বছরে মোট পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৯ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসাবে আগামী বছরে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি বাড়ছে ৮ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।
জানা যায়, ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন’ (বিপিসি)-এর চাহিদা মোতাবেক ২০২২ সালের পঞ্জিকা বছরের জন্য ৪৪ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন গ্যাস অয়েল (ডিজেল), ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন জেট এ-১ ফুয়েল, ৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন মো-গ্যাস (অকটেন) ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ও ১ লাখ ৫০ হাজার টন মেরিন ফুয়েল আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে।
চলতি বছরে এগুলোর আমদানির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছেÑ ডিজেল ৩৯ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন, জেট এ-১ ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, অকটেন ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল ৮০ হাজার মেট্রিক টন ও মেরিন ফুয়েল ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিপিসি’র প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে অকটেনের চাহিদা বাড়ছে দ্বি-গুনেরও বেশি এবং ফার্নেস অয়েলের চাহিদা বাড়ছে চারগুণের বেশি। এছাড়া ডিজেলের চাহিদা বাড়ছে ৫ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে জেট এ-১ ফুয়েলের চাহিদা অপরিবর্তিত থাকছে এবং মেরিন ফুয়েলের চাহিদা কমছে প্রায় অর্ধেক।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে গৃহীত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মোট বার্ষিক চাহিদার অর্ধেক বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি অনুযায়ী জি-টু-জি-এর আওতায় আমদানি বা ক্রয় করা হবে। চাহিদার অবশিষ্ট অর্ধেক জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায়।
বিপিসি’র মতে, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা নানা কারণে ও অপ্রত্যাশিতভাবে কম-বেশি হয়ে থাকে। চলতি বছর বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)-এর দাম বাড়ার কারণে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের চাহিদা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে গেছে। এ আকস্মিক চাহিদা পূরণের অতিরিক্ত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবার প্রশাসনিক অনুমোদন নিতে হয়। এতে সময় স্বল্পতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। এমতাবস্থায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জ্বালানি তেলের আকস্মিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২২ সালের পঞ্জিকা বছরের জন্য কিছু অতিরিক্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জানায়, দেশে ব্যাপকভাবে কোভিড-১৯ টিকা দেয়ার কার্যক্রম চলমান থাকায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা এবং পর্যটন খাতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়ার ফলে বিগত সময়ের তুলনায় ২০২২ সালে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়বে।