প্রথমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার পাচ্ছেন ২১ শিল্প উদ্যোক্তা
মো. আখতারুজ্জামান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে এবং শিল্প উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানকে শিল্পখাতের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, প্রণোদনা সৃষ্টি ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০ পাচ্ছেন ২১ শিল্প উদ্যোক্তা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নির্বাচিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বিসিকের মাধ্যমে গ্রাম-গঞ্জে হাজার হাজার শিল্প স্থাপিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের জন্যই শিল্পখাত বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাই ঐতিহাসিকভাবেই এ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব বাঙালি জাতির নিকট অনন্য।
তিনি বলেন, শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত দেশ বিনির্মাণের জন্য বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, রপ্তানি ও আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখাসহ দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ পুরস্কার প্রদানের অন্যতম লক্ষ্য হল বঙ্গবন্ধুর শিল্প পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে শিল্পায়নের যে সূচনা হয়েছিল সে অবদানকে স্মরণীয় ও বরণীয় করা এবং বাংলাদেশের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে শিল্পায়নের ক্রমবিকাশকে টেকসই করা।
মন্ত্রী বলেন, বেসরকারিখাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। এটি আলোকিত শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে পণ্য বহুমুখীকরণ, আমদানিবিকল্প পণ্য উৎপাদন ও শিল্পখাতে সৃজনশীলতার বিকাশে উৎসাহিত করবে। শিল্প উদ্যোক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিল্পখাতে তার সামগ্রিক অবদানকে বিবেচনা করা হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্ণওভার, আমদানি হ্রাস, আমদানিবিকল্প পণ্য উৎপাদন, স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সামাজিক দায়িত্ব পালন, নিষ্কন্টক ভূমি ও ভূমির পরিকল্পিত ও দক্ষ ব্যবহার, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রের অবদান বিবেচনা করা হবে। পরলোকগত শিল্প উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে মরণোত্তর পুরস্কারও দেয়া হবে।
পুরস্কারের জন্য শিল্প উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান মনোনয়নে কয়েকটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ আবশ্যক। এর মধ্যে শিল্প উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে স্থাপিত হতে হবে। শিল্প ক্ষেত্রে আবেদনকারী শিল্পপতি বা উদ্যোক্তার সামগ্রিক অবদান সন্তোষজনক হতে হবে ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ বা আমদানিবিকল্প বা রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর অবদান রাখতে হবে।
জানানো হয়, পুরস্কারের জন্য আবেদন যোগ্য হতে প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত কর পরিশোধ করতে হবে। কোনো ফৌজদারি অপরাধের জন্য কোনো ট্রাইব্যুনাল বা আদালত কর্তৃক ৬ মাস বা তদধিক সময়ের জন্য কোনো উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিককে দ-িত করলে এবং দ-ভোগের পর ন্যূনতম ২ বছর সময় অতিক্রান্ত না হলে কিংবা তার বিরুদ্ধে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে উক্তরূপ কোনো মামলা চলমান থাকলে, সেই শিল্প উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান মনোনয়নের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
আরও জানানো হয়, ঋণ খেলাপি, সরকারি বিল খেলাপি, কর খেলাপি, অর্থ পাচারকারী, সরকারি জায়গায় অবৈধ দখলদার ও পরিবেশ দূষণকারী শিল্প উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানও এই সম্মানজনক পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে না। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান একবার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হলে, একই ক্যাটাগরিতে পরবর্তী ৩ বছরের জন্য তার আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
শিল্প ক্ষেত্রে অবদান সাপেক্ষে (১) বৃহৎ শিল্প (২) মাঝারি শিল্প (৩) ক্ষুদ্র শিল্প (৪) মাইক্রো শিল্প (৫) হাইটেক শিল্প (৬) হস্ত ও কারু শিল্প এবং (৭) কুটির শিল্পের সাথে জড়িত নির্বাচিত শিল্প উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার প্রদান করা হবে। বিদ্যমান জাতীয় শিল্পনীতিতে বর্ণিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী মোট সাত ক্যাটাগরির শিল্পের প্রতিটিতে তিন জন করে মোট ২১ জন শিল্প উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবছর ১ জুলাই-৩০ জুন সময়ের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ বছর দুইটি ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে দু’টি করে প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হওয়ায় মোট ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৪টি, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৪টি, ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ৩টি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ৩টি, হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ৩টি, হস্ত ও কারু শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি এবং কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি।
১ম পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ৩ লাখ টাকা ও ২৫ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট, ২য় পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা ও ২০ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট এবং ৩য় পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা ও ১৫ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট দেয়া হবে। স্বর্ণের খাতগুলো ১৮ ক্যারেট মানের স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত। ক্রেস্টগুলো ইতোমধ্যে তৈরি করে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন কর্তৃক স্বর্ণের মান যাচাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়েছে। এছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সকলকেই সম্মাননাপত্র প্রদান করা হবে।