কম দামে তৈরি পোশাক রপ্তানি না করতে ঐক্যমত ব্যবসায়ী নেতারা
মো. আখতারুজ্জামান : কমে দামে তৈরি পোশাক রপ্তানি না করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। কম দামে পোশাক রপ্তানি না করতে একমত হয়েছে দেশের তৈরি পোশাক কারখানা শিল্পমালিকদের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বায়লা।
নেতারা বলেন, বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় বায়াররা (ক্রেতা) এখন পোশাকের বেশি দাম দিচ্ছে। যা সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটা ধরে রাখতে হবে। কম দামে আর পোশাকের অর্ডার নেবে না কোনো রপ্তানিকারক।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের তরুণ উত্তরাধিকারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বায়লা) আয়োজিত রোড টু রিকভারি শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ অঙ্গীকার করেছে পোশাক রপ্তানিকারকরা।
দেশের তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা সামলে আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। প্রচুর অর্ডার আসছে। ভালো দামও পাচ্ছি। এখন থেকে আমরা আর মূল্য কমেছে সেটা বলবো না। বার্গেনিং (দেনদরবার) করে বেশি প্রাইস আদায় করে দিচ্ছি। এই ধারা আমরা ধরে রাখতে চাই। আমরা আর কম দামে কোনো পোশাক বিক্রি করব না; অর্ডার নেব না। সব রপ্তানিকারকদের এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ আমাদের বিশ্বখ্যাত গ্রিন কারখানা আছে। আরও হচ্ছে বায়ারদের এটাও জানিয়ে দিয়েছি।
তবে, এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে; এই যে আমরা পোশাকের বেশি দাম পাচ্ছি, সেটাতে কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না। সুতাসহ সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পণ্যের দাম এবং অর্ডার বেড়েছে। এই সুযোগে বৈশিক প্রতিযোগিতায় আমাদের কারখানার মেশিনে সমতা নিয়ে আসতে হবে।
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাকের প্রাইস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের রপ্তানিকারকদের মধ্যে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। বায়াররা সেই সুযোগ নিয়ে কম দামে পোশাক কিনেছে। এখন আমরা সবাই একমত হয়েছি, আর কম দামে কোনো পোশাক রপ্তানি করব না। বায়াররা এতোদিন নীতি-নৈতিকতার কথা বলে কম দামে পোশাক কিনে আমাদের ঠকিয়েছে। আমরা আর ঠকতে চাই না।
তরুণ উদ্যোক্তা অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফ জহির বলেন, এখন সময় এসেছে, বায়ারদেরকে বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য করতে হবে। এতোদিন বায়াররা ভিয়েতনাম থেকে যে পোশাক ২০ ডলারে কিনেছে; আমাদের কাছ থেকে একই পোশাক কিনেছে ১০-১২ ডলারে। করোনার পর বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় বাধ্য হয়ে তারা বেশি দামে প্রচুর অর্ডার দিচ্ছে। এটাই আমাদের সুযোগ; সময় এখন আমাদের। আমরা কেউ যেনো কম দামে কোনো পোশাকের অর্ডার না নেই। মনে রাখতে হবে পণ্যের দাম ধরে রাখার বিষয়টি একান্ত আমাদের দায়িত্ব।
বায়লার সভাপতি তরুণ উদ্যোক্তা সায়েম গ্রুপের পরিচালক আবরার হোসেন সায়েমের সভাপতিত্বে সিনিয়র সাংবাদিক আবদুর রহিম হারমাছির সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী, গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং উৎপাদনকারীদের সংগঠন- বিজিএপিএমইএ’র উপদেষ্টা এবং সাবেক সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী, হোহেনস্টেইন ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং ঢাকায় কর্মরত অর্থনৈতিক বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থি ছিলেন, বায়লার সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়ার আহমেদ, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাকিব আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, রাফি মাহমুদ ও এম কে আলম, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি আকিব জাফরি শারীফ প্রমুখ।
পোশাক খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের নতুন সংগঠন বায়লা। বায়লার কাজ হচ্ছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সুনাম তুলে ধরা, বাজার গবেষণা, পণ্য বৈচিত্র্যকরণে নতুন প্রজন্মের চিন্তাভাবনাকে সমন্নয় করা। সেই সঙ্গে পোশাক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বায়লা। ৫০ বছরের কম বয়সী শিল্পোদ্যোক্তারা বায়লার সদস্য হতে পারবেন।
বায়লা সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সরকার-বেসরকারি খাত সম্মিলিতভাবে কাজ করলে সেই লক্ষ্য অবশ্যই অর্জন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, নতুন উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজার বৃদ্ধির নতুন সুযোগগুলো নিয়ে কাজ করার প্রয়াস থেকেই বায়লার জন্ম। তৈরি পোশাকখাতে গুণগত পরিবর্তন আনতে তারুণ্যের উদ্যোম ও প্রবীণের অভিজ্ঞতার সমন্বয় খুবই জরুরি। বায়লার মাধ্যমে আমরা তরুণদের ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।