মুদ্রাস্ফীতি ঝড়ে বেহাল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
রাশিদ রিয়াজ : পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতির হার গত তিন বছরে এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে তা এর আগের ৭০ বছরের রেকর্ডকে ভেঙ্গে দিয়েছে। চিনির মূল্য ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দেশটিতে বিক্রি হচ্ছে ১শ রুপি কেজিতে। ৫৪ রুপি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তা শতরুপিতে পৌঁছেছে। ঘি, আটা, পেট্রোলের দর সইতে না পেরে ক্রেতারা পাকিস্তানের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে। পাকিস্তানে এখন মুদ্রাস্ফীতির হার ৯ শতাংশ। পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা টের পাওয়া যায় দেশটিতে গত তিন বছরে খাদ্যদ্রব্যের দাম দ্বিগুণ হওয়ার সাথে সাথে বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার দেখে। দি প্রিন্ট
পাকিস্তানের করাচি, লারকানা, লাহোর, শুক্কুর, মার্দান, জ্যাকোবাবাদ, মোহমান্দসহ বিভিন্ন শহরে দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে মিছিল প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে। এর কারণ ঘি, ভোজ্য তেল, চিনি, আটা ও পলট্রি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১০৮ রুপির ঘি কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫৬ রুপিতে। ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৭ শতাংশ। ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের মূল্য পাকিস্তানে এখন ৬.৩৮ রুপি। গত তিন বছরে এলপিজি’র দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। আর পেট্রোলের মুল্য বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। একই সময়ে গরুর গোশতের দাম ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ রুপি কেজি। ডাল ও মসুর ডালের দামও উল্লেখযোগ্য বেড়েছে। নিউজ ইন্টারন্যাশনাল আর্টিকেল
এদিকে শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাস্ফীতির হার গত সেপ্টেম্বরে ৬ শতাংশ থেকে নেমে ৫.৭ শতাংশে নেমেছে। দেশটিতে খাদ্যমূল্যস্ফীতি গত আগস্টে সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে নেমে এখন দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে। খাদ্য নয় এমন পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩.৮ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশে স্থির রয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকার তথ্য বলছে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি সেপ্টেম্বরে তার আগের মাসের ৪.১ থেকে বেড়েছে ৫ শতাংশে। গত আগস্টে ০.২৮ শতাংশ থেকে আরো ০.৪ শতাংশ বেড়েছে।
নেপালে গত আগস্টে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩৫ শতাংশে। গত জুলাইতে এ হার ছিল ৪.১৯ শতাংশ। নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের তথ্য বলছে খাদ্যমূল্যস্ফীতি গত আগস্টে বেড়ে হয়েছে ৫.৮১ শতাংশ। এছাড়া বেভারেজ, আবাসন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য জালানির মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৩ শতাংশ পর্যন্ত। শিক্ষায় এ মূল্যস্ফীতি ৭.৪, বস্ত্র ও পাদুকা পন্যে ৭.১, পরিবহন ৫.৩, গৃহ উপকরণ ৪.৩, স্বাস্থ্যসেবা সাড়ে ৩, যোগাযোগ ২.৮ এবং বিনোদন ও সংস্কৃতি খাতে আড়াই শতাংশ মূল্যস্ফীতি ঘটেছে।
তবে ভারতে খুচরা পণ্যে মূল্যস্ফীতি আগস্টে ৫.৩ শতাংশে থাকলেও তা গত সেপ্টেম্বরে নেমে এসেছে ৪.৩৫ শতাংশ। যা গত ৫ মাসে মূল্যস্ফীতির সর্বনি¤œ হার। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এধরনের মূল্যস্ফীতি ২ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে স্থির থাকবে বলে আভাস দিয়েছিল। গত বছর সব্জীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যমূল্যস্ফীতি ১০.৬৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এছাড়া জালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াও অন্যান্য পণ্যমূল্যস্ফীতির আরেক কারণ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে গত মে মাসে মুদ্রাস্ফীতি ১.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পর পরের মাস জুনে ১.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ভোক্তাপণ্য মূল্যসূচকে দেখা যায় খাদ্যমূল্যস্ফীতি চড়ে যায় এবং রুটি ২৮ শতাংশ, মাংস ৬ শতাংশ, দুধ, পনির এবং ডিম ৫.৬ শতাংশ এবং তেল এবং চর্বির দর ৫.৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। এছাড়া আবাসন ১৭.২ শতাংশ, বস্ত্র ৭.২ শতাংশ, গৃহস্থালীর পণ্য ৭ শতাংশ, পরিবহন ২.৩ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যসেবা মূল্য ২ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশে বার্ষিক মূদ্রাস্ফীতির হার সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫.৬ শতাংশ। যা গত জুনের পর সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে খাদ্যমূল্যস্ফীতি গত আগস্টে ৫.১৬ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫.২১ শতাংশে দাঁড়ায়। খাদ্যবহির্ভুত পণ্যমূল্যস্ফীতি একই সময়ে ৬.১৩ থেকে বৃদ্ধি পায় ৬.১৯ শতাংশে।
মিয়ানমারে গত মার্চে মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২.৬৪ শতাংশ। দেশটির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা জানায় খ্যাদ্যমূল্যস্ফীতি মোটের উপর বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫.৯ শতাংশ, জালানি ও বিদ্যুতে ৮.৬, বস্ত্র ও অ্যাপারেল ৪.৭ ও বাড়ি ভাড়া ও মেরামত খাতে মূল্যস্ফীতি ঘটে ২.৭ শতাংশ।