এলডিসি পরবর্তী সময়ে আফ্রিকার বাজার রপ্তানি বৃদ্ধিতে সম্ভবানাময়
মো. আখতারুজ্জামান : পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, আফ্রিকা মহাদেশে প্রচুর জমি রয়েছে। যেখানে আমাদের উদ্যোক্তারা তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২১ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের ৫ম দিন শনিবার বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গতবছর আফ্রিকার দেশসমূহের আন্তঃবাণিজ্য ১৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের হলেও বাংলাদেশ তার মোট রপ্তানির মাত্র ১.০২ শতাংশ আফ্রিকায় রপ্তানি করে। যদিও সেখানে বাংলাদেশের ঔষধ, টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, পাটপণ্য ও পাদুকা সহ অন্যান্য পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এমতাবস্থায় এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধিকল্পে আফ্রিকার বাজারে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি সেখানে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা শীর্ষক ওয়েবিনারের বক্তারা।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র ১.০২ শতাংশ আফ্রিকার দেশগুলোতে রপ্তানি হয়ে থাকে। আফ্রিকার দেশসমূহ হতে বাংলাদেশ প্রধানত তুলা আমদানি করে। বর্তমানে বাংলাদেশের টেক্সটাইল, কৃষি, ফিশারিজ, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ খাতে আফ্রিকার বিনিয়োগ প্রায় ৩০৬ মিলিয়ন ডলার। আফ্রিকা ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু করা, বাংলাদেশে আফ্রিকার দেশসূহের দূতাবাস স্থাপন, এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষরের উপর জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ সুযোগ গ্রহণ করতে দেশের উদ্যোক্তাদের আরও উদ্যোমী হতে হবে। তিনি বলেন, ঔষধ, টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটজাতপণ্য, চামড়া ও পাদুকা প্রভৃতি পণ্যেও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রী আফ্রিকা অঞ্চলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণে সরকারের পক্ষ হতে নীতি সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান জানান, বিশে^র সাথে আফ্রিকার বাণিজ্যের পরিমান ৮৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বৈশি^ক বাণিজ্যের মাত্র ৩ শতাংশ এবং গতবছর আফ্রিকার দেশগুলোর আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ ১৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ্য করেন, আফ্রিকার বাণিজ্য প্রধানত আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (আগোয়া) এবং কমন মার্কেট ফর ইষ্টার্ন অ্যান্ড সাউদার্ন আফ্রিকার (কমেসা) মাধ্যমে বেশি মাত্রায় প্রভাবিত হয়ে থাকে। তিনি জানান, আফ্রিকায় বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইপিবি ৫টি বাণিজ্য মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।
রপ্তানিকৃত পণ্যের উপর আফ্রিকার দেশগুলোর উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নীত হচ্ছে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণের পর আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরো বেশি হরে বাংলাদেশী পণ্য আফ্রিকাতে রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণের উপর জোরারোপ করেন ইপিবি প্রধান। ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা) মো. তারিকুল ইসলাম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দেক হোসেন প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আফ্রিকায় অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহ সেখানকার বিভিন্ন চেম্বার, এসোসিয়েশন এবং উদ্যোক্তাদের সাথে প্রতিনিয়িত যোগাযোগ রাখছেন এবং আশা প্রকাশ করেন ভবিষ্যতে আফ্রিকাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও সম্প্রসারণ হবে।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর ঔষধের মোট চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়ে থাকে। যার ফলে এ খাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, ঔষধ শিল্প আফ্রিকায় শিল্প-কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে দক্ষ মানব সম্পদ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর বেশ স্বল্পতা রয়েছে।