সরকারের কাছে ১২৮ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের দায় মূল ঋণের চেয়ে দ্বি-গুন পরিমাণ সুদ
সোহেল রহমান : রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারের বকেয়া পাওনার পরিমাণ বাড়ছেই। ২০২০ সালের জুন শেষে ১২৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সুদাসলে মোট দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুন শেষে সুদাসলে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট দেনার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে দেনা বেড়েছে ৪২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকার বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত ও স্থানীয় সরকার (স্ব-শাসিত) সংস্থাগুলোকে তাদের উন্নয়ন প্রকল্প ও অনুন্নয়নমুলক কাজে অর্থায়ন করে থাকে। এ অর্থের উৎস দুটি- একটি সরকারের নিজস্ব সম্পদ এবং অন্যটি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রকল্প সহায়তা। উভয় ক্ষেত্রেই সরকার চুক্তির মাধ্যমে ঋণ হিসেবে এ অর্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দিয়ে থাকে। ঋণগ্রহণকারী সংস্থাকে চুক্তির শর্তানুসারে পরিশোধসূচী অনুযায়ী কিস্তিভিত্তিক সুদসহ বা সুদ ব্যতীত এ অর্থ সরকারকে ফেরৎ দিতে হয়। সংক্ষেপে এটাকে বলা হয় ডেট সার্ভিস লায়াবিলিটি (ডিএসএল)।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিএসএল হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল ঋণের চেয়ে পরিশোধযোগ্য সুদের পরিমাণ বেশি। মোট দেনা ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকার মধ্যে মূল ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৬৮ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা এবং সুদের পরিমাণ ১ লাখ ৭ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক বছরের পর বছর সুদ পরিশোধ না-করায় মূল ঋণের চেয়ে সুদের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে গেছে। দফায় দফায় তাগাদা দিয়েও মূল ঋণ ও সুদ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেনার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেনার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। প্রতিষ্ঠানটির মোট দেনার পরিমাণ হচ্ছে ৬৫ হাজার ৭৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ২৪,২৩৮.৮০ কোটি টাকা ও সুদ ৪১,৫৪৪.৭২ কোটি টাকা)।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেÑ বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)-এর মোট দেনার পরিমাণ ১৮ হাজার ২২৯ কোটি ৯ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ৬,৯৮৩.৩১ কোটি টাকা ও সুদ ১১,২৪৫.৭৭ কোটি টাকা); বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)-এর মোট দেনার পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ৫,৫৪৪ কোটি টাকা ও সুদ ৯,৩০২.৬১ কোটি টাকা); বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর মোট দেনার পরিমাণ ১২ হাজার ৪২ কোটি ২৯ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ৪,৪২৮.৬৪ কোটি টাকা ও সুদ ৭,৬১৩.৬৫ কোটি টাকা); বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)-এর মোট দেনার পরিমাণ ১১ হাজার ৫১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা (এর মধ্যে মূল ঋণ ৪,২৮৬.২৯ কোটি টাকা ও সুদ ৭,২২৫.০৫ কোটি টাকা)।