বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক মশলা রাধুনি
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ইলিশ মাছ রান্নায় রাধুনি মসলার ব্যাপক ব্যবহার আছে। যা ইলিশ মাছের স্বাদকে বৈচিত্র্যময় করে। আচার বানাতেও রাধুনি মসলা ব্যবহার হয়।
খুবই ঝাঁঝালো একটি মসলা রাধুনি। এর ইংরেজি নাম সেলেরি সিড। রাধুনি এপিয়াসি পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। বাংলায় রাধুনি নামে পরিচিত এই উদ্ভিদটি হিন্দি ও উর্দু ভাষাতে আজমোদ, বর্মী ভাষাতে ‘কান্ত-বালু’ এবং থাই ভাষাতে ‘ফাক চি লোম’ নামে পরিচিত।
দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে এটি প্রচুর চাষ করা হয়। এর সুগন্ধী বীজ বাঙালির রন্ধনপ্রণালীতে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। রাধুনি উদ্ভিদের টাটকা পাতা থাইল্যান্ডে ভেষজ হিসেবে এবং মিয়ানমান ও শ্রীলঙ্কাতে ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রাধুনির ক্ষুদ্র বীজ দেখতে জোয়ান ও জিরার বীজের মত মনে হলেও দেখতে অনেক ছোট। জোয়ানের বীজের সঙ্গে দেখতে ও স্বাদে কাছাকাছি বলে এগুলিকে একটির সঙ্গে আরেকটি ভুল করা হয় এবং বদলি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
রাধুনি মসলার গন্ধ বিলাতি রাধুনির মতো কিন্তু স্বাদে জোয়ানের মতো। বাঙালির রন্ধনপ্রণালীতে গোটা বীজ খুব গরম তেলে দ্রুত ভেজে ফাটিয়ে ব্যবহার করা হয়। কখনও কখনও পাঁচফোড়ন মসলার মিশ্রণে কালো সরিষার বীজের পরিবর্তে রাধুনির বীজ বেশি ব্যবহার করা হয়। বাঙালির রান্নার অপরিহার্য পাঁচফোড়নের অন্যতম উপাদান এই রাধুনি। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এই মসলাটি দেশের অন্য এলাকার থেকে বেশি পরিচিত। উত্তরবঙ্গে বড় মাছ এবং মাংস রান্নায় এই মসলাটি ব্যবহার রয়েছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জের মসলা গবেষণা কেন্দ্র এই প্রথম বারি রাধুনি-১ নামের একটি রাধুনি মসলা উদ্ভাবন করেছে। মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হামিম রেজা আরও জানান, এবছরেই নভেম্বর মাস থেকে শীতকালীন এ মসলাটি কৃষক পর্যায়ে প্রদর্শনী আকারে চাষ হবে।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু হেনা ফয়সাল ফাহিমের নেতৃত্বে শিবগঞ্জের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী ২০২০-২১ অর্থবছরে এ মসলার জাতটি উদ্ভাবন করেন। এ বছরেরই মার্চ মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড মসলাটি অনুমোদন দেয়। অল্প জায়গায় তুলনামূলক কম খরচে বেশি ফলন হওয়ায় এ মসলা ফসলটি বিলাতি ধনিয়ার মতোই অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক চাষে এ মসলাটি বিলাতি ধনিয়ার মতোই লাভজনক হতে পারে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও