শেয়ারবাজারে লেনদেনের খরা
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের মতো সোমবারও দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেনের খরা দেখা দিয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের প্রধান প্রধান সূচক কমেছে। একই সাথে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন সাড়ে তিন মাস পর ১২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে গেছে। ডিএসইতে এক হাজার ২৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে তিন মাস ১৩ দিন পর লেনদেন ১২ শত কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। এর আগে চলতি বছরের ১৯ জুলাই লেনদেন ১২শত কোটি টাকার ঘরে হয়েছিল।
এবিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, সার্বিকভাবে বাজারে এখন এমন দরপতনের কোনো কারণ দেখছি না। এভাবে দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এই দর পতনের আগে বাজার কিন্তু অনেকটাই উঠেছে। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ হয়তো এখন প্রফিট টেকিং করছেন। ফলে বিক্রির চাপ বাড়ায় দরপতন হচ্ছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার খুবই সেনসিটিভ। যেকোন বিষয় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর কোনো কারণে বাজারে একটু দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। সবাই তখন বিক্রি করতে চায়। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে গিয়ে পতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এখনো হয়তো সেটাই হচ্ছে।
এদিকে টানা দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতিও কমে গেছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, শেয়ারবাজার ভালোর দিকেই যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করে আবার পতন ধারায় চলে যাচ্ছে। এটা কোন কু চক্র মহল শেয়ারবাজার ধস নামাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকার দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। রাজ্জাক আরও বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারা বাজার দরপতন ঘটাচ্ছে।
এবিষয়ে বিনিয়োগকারী আক্তারুজ্জামান বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর সম্প্রতি শেয়ারবাজার অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এতে বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি। কিন্তু গত কয়েকদিনের দরপতনে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছি। বাজারে প্রতিদিন যে হারে পতন হচ্ছে তাতে আবারও পুঁজি হারানোর শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। হঠাৎ কেন এমন পতন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। বাচ্চু নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, প্রতিদিনই ভাবি আজ হয়তো শেয়ারের দাম একটু বাড়বে। সকালের দিকে দাম একটু বাড়লেও দিন শেষে দরপতন হচ্ছে।
প্রতিদিনই বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছি। আমি যে কয়টি শেয়ার কিনেছি, সবগুলোতে লোকসানে রয়েছি। এই লোকসান কোথায় গিয়ে থামবে কিছুই বুঝতে পারছি না। এভাবে বাজার পড়তে থাকলে সবার মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলছি, সবাই হতাশার সুরে কথা বলছে।
গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২.৯০ পয়েন্ট বা ০.০৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৯৮.০৩ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩.৯৬ পয়েন্ট বা ০.২৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫.১০ পয়েন্ট বা ০.১৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৭৪.৪৬ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৬২৫.৭০ পয়েন্টে। ডিএসইতে ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৩৩টির বা ৩৫.৩৭ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ২০৫টির বা ৫৪.৫২ শতাংশের এবং ৩৮টির বা ১০.১১ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৮.৭৪ পয়েন্ট বা ০.২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫৩৯.০৫ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২৮৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৬টির আর ২৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪৩ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।