দস্যুতা থেকে স্বাভাবিক জীবনে আসা আত্মসমর্পণকারীদের মামলা প্রত্যাহার হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ফকির হাসান : দস্যুতা থেকে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ব্যক্তিদের মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া আপনাদের সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই গতি একটু ধীর। কিন্তু দয়া করে আপনারা অন্য কোনও চিন্তা করবেন না। কেউ যদি আবারও দস্যুতায় ফিরে যান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে র্যাবের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনে র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প করা হচ্ছে। সুন্দরবনকে আর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। আপনারা যারা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, তাদের আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করছি। আগামীতেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তবে কেউ যদি মনে করেন আবার আগের পেশায় ফিরে যাবেন, তাদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে র্যাব এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি করছে।
আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মামলার বিচারের বিষয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মামলার কাগজ নিয়ে আসেন। সরকারি অনুদান যাতে উকিল ও মামলা লড়তে খরচ না হয় সেটা আমরা দেখব।
তিনি বলেন, আগে পটুয়াখালী থেকে সাতক্ষীরা বাগেরহাট এলাকায় জলদস্যুর কারণে বাসায় থাকা যেত না, মানুষকে আটকে রাখা হতো। মুক্তিপণ দাবি করা হতো, ডাকাতি করা হতো, ডাকাতি কাজে জড়াতে বাধ্য করা হতো। মধু সংগ্রহকারীরাও রেহাই পেত না। আজ সে চিত্র বদলেছে। সবকিছুর সমাধান হয়েছে। সুন্দরবন আজ দস্যুমুক্ত।
মোংলা পোর্ট ও এর আশপাশে এলাকায় আমদানি করা পণ্য খোয়া যাচ্ছে বলে খুলনার মেয়র জানিয়েছেন। সে কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানকার কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। খুলনা কোস্টগার্ড বিষয়টি দেখবেন। প্রয়োজনে নৌ পুলিশের ডিআইজি আছেন তিনিও দেখবেন। আমরা নদীতে কিংবা উপকূলে কোথাও আর কোনো ডাকাতিবৃত্তি দেখতে চাই না।
সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার তৃতীয় বছর ও আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন উপলক্ষে রামপালে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে র্যাব। অনুষ্ঠানে র্যাবের পক্ষ থেকে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩১৮ জনকে ১০২টি ঘর, মালামালসহ ৯০টি মুদি দোকান, ১২টি জালসহ মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ২২৮টি গবাদি পশু বিতরণ করা হয়।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সাবেক জলদস্যুরা তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছিলেন গত কয়েক বছর ধরেই।
র্যাবের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু ও সদস্য পীর ফজলুর রহমান, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদসহ র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র্যাবের প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে যারা খুন ও ধর্ষণ মামলার আসামি, তাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। বাকিদের মামলা নিষ্পত্তিতে আমরা আইনানুগ সহায়তা করবো। যারা খারাপ পথ থেকে ফিরে এসেছেন তাদের বুকে টেনে নিতে স্থানীয়দের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আইজিপি বলেন, তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে সহায়তা করুন। তিনি বলেন, সুন্দরবনের নিরাপত্তায় দুটি ক্যাম্প রয়েছে। আরও ক্যাম্প দরকার।
বন ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করার সময় র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের বর্তমান আইজিপি বলেন, অনেকেই আত্মসমর্পণের এই প্রক্রিয়া ভ-লের চেষ্টা করেছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনায় তারা পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন বলে তিনি জানান।
র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। তবে কেউ আবার ভুল পথে পা বাড়াবেন না। আমাদের নজরদারি চলছে। আমাদের কথা মতো সুপথে থাকলে র্যাবও আপনাদের সঙ্গে থাকবে। তা না হলে পুরনো পেশায় কেউ ফেরার চিন্তা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, সুন্দরবনে নিয়মিত নজরদারি করা হচ্ছে। নতুন কেউ যাতে দস্যু বাহিনী গড়ে তুলতে না পারে, সে জন্য র্যাব সচেষ্ট রয়েছে। যারা বিপথে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তারা কোনও ছাড় পাবেন না, তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।