শর্ত সাপেক্ষে পিপলস লিজিংয়ের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে
মো. আখতারুজ্জামান : শর্ত সাপেক্ষে অবসায়নের প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) পাওনাদারদের অর্থ দিয়ে দেয়া হচ্ছে। গ্রাহদের পাওনা টাকার ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। মতিঝিলে অবস্থিত পিএলএফএসএল’র অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, বেশকিছু দিন থেকে এ অর্থ দেয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য প্রথমে গ্রাহকদের আবেদন করতে হচ্ছে। মানবিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে গ্রাহকদের আবেদন করতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ্য থেকে বলা হচ্ছে। আবেদনে চিকিৎসা ব্যয়ের কথা উল্লেখ করলে সেক্ষেত্রে উপযুক্ত কাগজপত্র দিতে বলা হচ্ছে।
পিএলএফএসএল’র বোর্ড সদস্যরা গ্রাহকদের আবেদপত্রগুলো যাচাই বাচাই করে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৫ জন গ্রাহককে বিভিন্ন অংকে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। যাদের পাওনার পরিমাণ কম সেইসব গ্রাহকদের ১০ শতাংশের বেশি টাকা পরিশোধা করা হচ্ছে। যাদের পাওনার পরিমাণ বেশি তাদের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পিএলএফএসএল’র ব্যাংক হিসেবে বর্তমানে ৫০ কোটি টাকা রয়েছে।
মঙ্গলবার মতিঝিলে অবস্থিত পিএল এফএসএল’র কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন গ্রাহক কেউ আবেদনপত্র জমা দিচ্ছে আবার কেউ লিখছেন। এমন এক গ্রাহক আব্দুস সালাম জানান, তার পাওনা ৪ লাখ টাকা। তিনি টাকা চেয়ে আবেদন করেছেন। চিকিৎসার ব্যয়ের টাকা চেয়ে এই আবেদন করেছেন। অনেকটা আক্ষেপ করে তিনি জানান, যখন প্রতিষ্ঠাটির ভালো অবস্থান ছিলো তখন লভ্যাংশ দিয়েছিলো আমি সেটা না উঠিয়ে আবার বিনিয়োগ করেছি। আর লাভ আসল পুরোটাই অনিশ্চয়তায় রয়েছে।
নিজের টাকা পরে আছে। অথচ চিকিৎসা করাতে পারছি না।
গত ১৩ জুলাই প্রকাশিত হাই কোর্টের আদেশে পিএলএফএসএলকে পুনরুজ্জীবিত করতে একটি পর্ষদ গঠন করা হয়। আদেশে নবগঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যানকে সব সদস্য ও সাময়িক অবসায়কের (অকার্যকর) সঙ্গে কথা বলে সুবিধাজনক সময়ে পর্ষদের প্রথম সভা আহ্বান করতে নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। এছাড়া আরও তিনটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আমানতকারীদের বিষয়ে বলা হয়েছে, আমানত ফেরত পেতে আগামী ৬ মাস তারা পিএলএফএসএল এর পর্ষদের কাছে দাবি জানাতে পারবে না। তবে মানবিক কারণে পর্ষদ কোনো আমানতকারীরর আমানত ফেরত দিতে পারবে।
হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের প্রতি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পিএলএফএসএল’র পর্ষদকে কার্যকর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং নবগঠিত পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দিয়ে আদালত আদেশে বলেছে, চূড়ান্ত অব্যাহতি দিয়ে আদালতের আদেশ না হওয়া পর্যন্ত পিএলএফএসএল এর পরিচালনা পর্ষদের সাথে সাময়িক অবসায়ককে (অকার্যকর) সংযুক্ত রাখবেন।
আদেশে বলা হয়েছে, যদি তিনি এ ব্যপারে সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পান তবে কোম্পানির কার্যক্রম, সক্ষমতা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ অনুযায়ী পিএলএফএসএল পুনর্গঠন বা অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে চারটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। ওই চার কোম্পানির মধ্যে পিপলস লিজিংও একটি।
পিপলস লিজিংয়ে প্রতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীর পাওনা: পিপলস লিজিংয়ের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের আটকে রয়েছে ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা।এর মধ্যে ৬ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৪২১ কোটি টাকা, ৮ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকের ৪১০ কোটি টাকা আমানত আটকে পড়েছ। এছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন পিপলস লিজিংয়ের কাছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পাবে। অন্যদিকে ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর ৭১২ কোটি টাকা আমানত আটকে পড়েছে।
সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিপলসের কাছে বিভিন্ন গ্রাহকদের পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। বিপরীতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলস লিজিংয়ের পাওনা ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল। ২০১৯ সালে ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলসের অবসায়নের আবেদন করে। গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করলে ১০ জুলাই অবসানের বিষয়টি অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও