অক্টোবরে আয় ছাড়ালো ৪৭২ কোটি ডলার
শোভন দত্ত : সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়েছিল। সেই মাসে সর্বোচ্চ ৪১৭ কোটি ডলার বা ৩৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। তবে সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর ছাড়িয়েছে সেপ্টেম্বরকেও।
গত মাসে ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার বা ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যমতে, অক্টোবরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। রপ্তানি হয়েছে ৪১৭ কোটি ডলার। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে এই পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়নি। মূলত তৈরি পোশাকে উল্লম্ফনের ওপর ভর করেই রপ্তানি আয় হাসছে। অন্যদিকে, গত বছরের একই সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৬২ কোটি ১১ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বিকেএমইএ’র পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেন, ইউরোপ- আমেরিকার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। বায়ারদের কাছ থেকে প্রচুর অর্ডার আসছে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৬২ কোটি ১১ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ। এই চার মাসে নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
শামীম এহসান বলেন, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেশ বাড়বে। ইউরোপ-আমেরিকায় পরিস্থিতি ভালো। তারা প্রচুর পোশাক কেনা শুরু করেছে। চাহিদা অনুযায়ী পোশাক দিতে পারলে রপ্তানি আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি ম্যাটেরিয়াল কস্টও বেড়েছে। যে পণ্য বানাতে আগে ৯ টাকা খরচ হতো, তা বানাতে ১৫ টাকা খরচ হচ্ছে। আর বেচতে হচ্ছে ১৮ টাকায়। ৫০ শতাংশের ওপর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। দাম বাড়ায় মোট বিক্রির ভলিউমও বেড়েছে।
গার্মেন্টস ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, কৃষি পণ্যসহ অন্য সব খাতের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তার মধ্যে ওষুধ রপ্তানি ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ২৯ দশমিক ০৪ শতাংশ ও হোম টেক্সটাইল রপ্তানি ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
দেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন- বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ভারত ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগী দেশে কোভিড-১৯ জনিত রপ্তানি বিচ্ছিন্নতা, মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং চীনে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে দেশের পোশাক খাতে কার্যাদেশ বেড়েছে, ফলে আমরা রপ্তানিতেও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করছি।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি আরও বলেন যে, পোশাক শিপমেন্ট বেড়েছে কারণ স্থগিত এলসি শিপমেন্ট থেকে ভাল পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়েছে, যেগুলি কোভিড -১৯ এর কারণে স্থগিত করা হয়েছিল।
তবে এটি আত্ম-সন্তুষ্টির বিষয় নয় কারণ এর ধারাবাহিকতার জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে, যোগ করেন তিনি।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অক্টোবরে রপ্তানিতে এই রেকর্ড প্রবৃদ্ধি পশ্চিমা উন্নত দেশগুলির শক্তিশালী পুনরুদ্ধারকে প্রতিফলিত করে। এর আগে, মহামারির সৃষ্ট দুর্বল অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কারণে এসব বাজারে পণ্যের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে ছিল।
লকডাউনের মতো চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর এসব দেশে মানুষের চলাচল ও স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। বেড়েছে সশরীরে অফিসে যোগদান ও পর্যটন। দুটি ঘটনাই বাংলাদেশ পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের মতো যেধরনের পণ্য রপ্তানি করে তার চাহিদা বৃদ্ধি করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।