সব ধরনের গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি জনজীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে : ক্যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিজেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহন মালিক সমিতি।
বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংক, লরি, প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় গাড়ি চালানো সম্ভব না। মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে। আমরা তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। শুক্রবার ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়ন বলেছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে।
আর বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, তারা ভাড়া বাড়ানোর একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। গাড়ি চালানো বন্ধ হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হবে বিকালে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মনির বলেন, তেলের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার না করলে আমরা শুক্রবার সকাল থেকে পণ্যপরিবহনবাহী সব যানবাহন অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যাবো। মালিক-শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তাজুল ইসলাম বলেন, আগের দশ দফা দাবি মানা হয়নি, টোল বাড়িয়েছে, আজ লিটারে ১৫ টাকা করে দাম বাড়ানো হলো- সব মিলিয়ে কী করবো আমরা। এ অবস্থায় আমাদের কোনো উপায় নেই।
এদিকে তেলের দাম বাড়ায় পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর কোনো সরকারি ঘোষণা এখনও না এলেও অনেক এলাকায় মালিকরা নিজেরাই নিজেদের মার্জি মাফিক ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ আসছে।
বাস মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সরকারকে হয় এই মূল্য বৃদ্ধি বাদ দিতে হবে, না হয় গাড়ি ভাড়া বাড়াতে হবে।
মনজু মোল্লা নামে এক পরিবহন মালিক বলেন, বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অন্তত অর্ধেক বাস চলছে না। কারণ নতুন দামে ডিজেল কিনে আগের ভাড়ায় চালালে লাভ থাকবে না।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির পর বৃহস্পতিবার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। তা মন্ত্রণলায়ে জমা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন মো. মজুমদার বলেন, জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ করে বাড়িয়েছে সরকার। এক দিন আগে বাড়িয়েছে ব্রিজ টোল। সেই ব্রিজ টোলটা ২৫৭ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিলো। তার এক দিন পর ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়েছে। সারা বাংলাদেশের মালিক-শ্রমিকরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সরকারের নির্ধারিত ভাড়াতেই যাত্রীরা তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন। আগের ভাড়াই নিচ্ছে গণপরিবহনগুলো। ভাড়া বাড়ানো নিয়ে কাউন্টারগুলোতে কোনো কথাও শোনা যায়নি।
ঢাকা থেকে ধনবাড়ী চলাচলকারী বিনিময় পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আরিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার মহাখালী থেকে ধনবাড়ী মধুপুর রোডে প্রতিবার যেতে এই পরিবহনে ১০০ লিটার তেল প্রয়োজন হয়। এই তেল কিনতে সাড়ে ৬ হাজার টাকা লাগতো। বৃহস্পতিবার থেকে বাড়তি আরও ১৫০০ টাকা লাগবে। অনেক ট্রিপে যাত্রী কম ওঠায় ভাড়া আসে ১৫০০ টাকা। এমন বাস্তবতায় মালিকপক্ষের বসতে হবে। তারা যে ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে, সেটাই আমরা নেব।
এনা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সাইফুল ইসলাম রুবেল বলেন, মালিকের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আগের নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে আমাদের পরিবহনে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।
শাহ ফতেহ আলী পরিবহনে করে বগুড়া থেকে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসা আনসার আলী বলেন, আগে ভাড়া সাড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়ে ঢাকায় আসছি। বুধবার রাতেই ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে এখনও পরিবহনে ভাড়া বাড়েনি। ভাড়া বাড়লে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হবে আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যাতে ভাড়া না বাড়ানো হয়। সরকারের কাছে দাবি, আগের দাম রেখে মালিকপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা।
এদিকে কেরোসিন এবং ডিজেলের দাম বৃদ্ধি ভোক্তা পর্যায়ে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহন, যাতায়াত খাতে ব্যয় বৃদ্ধি থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্য ও সেবার দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেবেন। যা জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। এরপর পৃষ্ঠা ২, সারি ১