আগামী জুনের আগেই বিশ্বে জ্বালানি তেলের দর ব্যারেল প্রতি ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে
রাশিদ রিয়াজ : ব্যাংক অব আমেরিকার গবেষণার এ তথ্য দিয়ে ব্লুমবার্গ বলছে বিশে^ তেলের উৎপাদন সংকট ঘিরেই তেলের দাম বাড়তে থাকবে এবং অপরিশোধিত তেল ছাড়াও কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলএনজির দামও বাড়তে থাকবে। একই সঙ্গে ওপেকের তেল উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় তেলের দর বাড়তে বাজার পরিস্থিতি সহায়ক হয়ে উঠেছে। এক মাস আগে, তেলের দর আগামী ৬ মাসে ব্যারেল প্রতি শত ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বাজার বিশ্লেষকরা। সিএনএন
তবে আগামী শীতে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত গত কয়েক বছরের চাইতে বেশি হ্রাস পেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এতে তেলের চাহিদা আরো ব্যাপকভাবে বাড়বে যা এর মূল্যকে আরো বৃদ্ধি করতে পারে শঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী দেড় বছরে তেলের দাম বৃদ্ধির আরেক কারণ হবে কপ২৬ সম্মেলনে ১৯০টি দেশ কয়লা ব্যবহার না করতে সম্মত হয়েছে। এসব দেশ কয়লার বিকল্প হিসেবে জালানি তেলের দিকে ঝুঁকবে। গত সেপ্টেম্বরে বাজার বিশ্লেষকরা ইউরোপে জালানি সংকটের আভাস দেন। যা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। চীনে ইতিমধ্যে তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ তেল ব্যবহার করা হচ্ছে।
ব্যাংক অব আমেরিকার গবেষণায় আরো বলা হচ্ছে, পরিশোধন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় ডিজেল, জেট ফুয়েল ও গ্যাসোলিনের দাম বাড়তে শুরু করেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। ওপেক দিনে অতিরিক্ত ৪ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিলেও তা এখনো শুরু হয়নি। অন্যান্য ব্যবসায়ী ও ব্যাংক বিশেষ করে গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করছে কোভিড মহামারী পূর্ব সময়ের মত দিনে ১০ কোটি ব্যারেল তেলের চাহিদা ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন দেশ কোভিড টিকা দান কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় স্বাভাবিকভাবে তেলের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে ওপেক সদস্য দেশগুলো চুক্তি অনুযায়ী তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সম্মত হচ্ছে না। গত অক্টোবরে দিনে সাড়ে ২৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে ওপেক সদস্য দেশগুলো। রয়টার্সের সমীক্ষা বলছে প্রতি মাসে তেলের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে ১ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল। এরফলে ওপেককে অন্তত দিনে ২ লাখ ৫৪ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আহবান জানিয়েছে মিত্রদেশগুলো। এ বছরের শুরু থেকে ওপেকের ১০টি সদস্য দেশ প্রতিমাসে ৪ লাখ ব্যারেল বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওপেকের পাশাপাশি রাশিয়াসহ অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশ উৎপাদন বৃদ্ধির আশ^াস দেয়। উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে কঙ্গো, গায়েনা ও গ্যাবনের মত দেশগুলো তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারছে না।
পাইপ লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নাইজেরিয়ায় দিনে ৭০ হাজার ব্যারেল তেল কম উৎপাদন হচ্ছে। লিবিয়াতে পাইপলাইনে ছিদ্র হওয়ার কারণে তেল উৎপাদন ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। তবে ওপেকের দুই তেল বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব ও ইরাক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো তেলের দর ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলারে রাখা সম্ভব হচ্ছে। অবশ্য এ দর গত তিন বছরে সর্বোচ্চ।
অথচ কোভিড মহামারীর সময়ে তেল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল ১০ মিলিয়ন ব্যারেল। এখন জাপান, ভারত ও আমিরাত ওপেক সদস্যদেশগুলোকে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছে।
তবে ওপেকের তেল উৎপাদন নিয়ে অধিকাংশ সদস্য দেশ একমত। বাজার দেখে শুনে চাহিদা বুঝে ধীরে ধীরে তেল উৎপাদন বৃদ্ধির কথা ভাবছে ওপেক। অ্যাঙ্গোলা থেকে শুরু করে ইরাক, আলজেরিয়া কিংবা নাইজেরিয়া ওপেকের সঙ্গে একমত পোষণ করছে। কিন্তু তেলের চাহিদা বাড়ছে দেখে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাস প্রতি গ্যালন ৩.৪০ থেকে ৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক অব আমেরিকার হেড অব গ্লোবাল কমোডিটি ফ্রান্সিকো ব্লান্স বলেছেন এভাবে তেলের দাম বাড়তে থাকলে তা আগামী জুন নাগাদ বর্তমান দরের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। চলতি বছরে তেলের দর ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া ৫০টি তেল কোম্পানি তাদের বার্ষিক বাজেট ১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও