চট্টগ্রামের সোনাইছড়া লেক ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা
অর্থনীতি ডেস্ক : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সোনাইছড়া পানি প্রকল্পের সেচ সুবিধায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে রবিশস্য ও ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় প্রায় ১০ একরের একটি লেকও রয়েছে। লেক ও আশপাশের ঝরনাগুলোকে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে।
১০ একর লেকের স্বচ্ছ নীলজলরাশি মুগ্ধ করবে যেকোনও ভ্রমণপিপাসুকে। লেকের পাড়ে শোনা যাবে বুনো হরিণ ও নানা প্রজাতির পাখির ডাক। আছে প্যাডেল চালিত বোট। কায়াকিং-এর পরিকল্পনাও রয়েছে সমিতির।
ইতোমধ্যে সোনাইছড়া ঝরনা ইজারা দিয়েছে বারৈয়ঢালা ন্যাশনাল পার্ক। সেখানে সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির উদ্যোগে ইকো রিসোর্ট ও বারৈয়ঢালা ন্যাশনাল পার্কের অধীনে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব দোকানপাট।
সোনাইছড়া ঝরনার এক কিলোমিটার উত্তরে খইয়াছড়া ঝরনা। এক কিলোমিটার দক্ষিণে নাপিতছড়া ঝরনা। বারৈয়ঢালা ন্যাশনাল পার্ক (সিএমসি) কমিটি খইয়াছড়া ও নাপিতছড়ায় যাওয়ার জন্য পাহাড়ের ওপর রাস্তাও করেছে। তবে সোনাইছড়া ঝরনায় যাওয়ার জন্য একমাত্র রাস্তাটি এখনও অবহেলিত। যেতে হয় কাদামাটি পেরিয়ে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি) উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, সোনাইছড়া ঝরনার রাস্তার উন্নয়ন ও তিনটি সেতু নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি ও ন্যাশনাল পার্কের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. সরওয়ার উদ্দিন বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি প্রায় একশ হেক্টর জমি এখন চাষযোগ্য। আবার পর্যটনেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটকদের জন্য টয়লেট, রেস্ট হাউজসহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে এখান থেকেও সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারবে। জানা গেছে, ২০০৬ সালে উপজেলার ১২ নম্বর খইয়াছড়া ইউনিয়নের ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাড়ে ছয়শ কৃষককে নিয়ে সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠন হয়। এ সমিতি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়। জমানো তহবিল থেকে ঋণও বিতরণ করে।
এদিকে কয়েক বছর আগেও বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে পূর্ব পোলমোগরা গ্রাম প্লাবিত হতো। তাতে ফসল নষ্টের পাশাপাশি পুকুরের মাছও ভেসে যেত। সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি পাহাড়ের পাদদেশে একটি বাঁধ ও স্লুইচ গেট স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি) অফিসে যোগাযোগ করে। এলজিইডি ২০০৬ সালে ৪২ শতক জমি অধিগ্রহণ করে। পরে ৫২ শতক জমিতে প্রায় ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বারোমাসি সোনাইছড়ার মুখে বাঁধ নির্মাণ ও পানি আটকানোর রেগুলেটর বসায় এলজিইডি। একইসঙ্গে সাড়ে ৩ কিলোমিটার খাল সংস্কার করা হয়। ২০১৮ সালে বাঁধ নির্মাণ ও রেগুলেটর স্থাপনের কাজ শেষ হয়।
উপজেলার ১২ নম্বর খইয়াছড়া ইউনিয়নের ৩৭ নম্বর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, খইয়াছড়া ইউনিয়নের ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আগে বোরো চাষ হতো না। সোনাইছড়ি পানি প্রকল্পের কারণে গত বছর ১০ হেক্টর জমিতে বোরো হয়েছে। চলতি বছর ২০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া লেকের পানির কারণ নানা শস্যও চাষ হচ্ছে। বোরো, আউশের বীজতলা, রবিশস্যসহ প্রায় একশ হেক্টর জমি চাষের আওতায় এসেছে।
সোনাইছড়া পানি প্রকল্প ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া বাজার থেকে দুই কিলোমিটার ও বড়তাকিয়া রেল স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার পূর্বে। এ প্রকল্পে রয়েছে নয়নাভিরাম ঝরনা। লেকে কার্প জাতীয় মাছ ছেড়েছে সমিতি। সেগুলোও প্রায় ৩-৫ কেজি ওজনের হয়েছে। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন