অক্টোবরে পৌনে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়
অর্থনীতি ডেস্ক : করোনা মহামারী স্বাভাবিক হতে না হতেই রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক, চামড়া, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্যসহ প্রায় সব খাতেই অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। তবে পাটে রপ্তানি আয় কমে গেছে।
রপ্তানি বাণিজ্যে সুবাতাস বইছে। একের পর এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে সবাইকে অবাক করে দিচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে পৌনে ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন তারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ৪০ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।
এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩৬.৪৭ শতাংশ বেশি; আর গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে বেশি ৬০.৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি।
এই চার মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৩.৩৩ শতাংশ। করোনা মহামারি স্বাভাবিক হতে না হতেই রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক, চামড়া, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্যসহ প্রায় সব খাতেই অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। ব্যতিক্রম শুধু পাট খাত।
জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে এ খাত থেকে আয় কমেছে ২৪.১১ শতাংশ। নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে আরও বেশি, ২৬.৬০ শতাংশ।
অথচ বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। ১ জুন শেষ হওয়া ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ (১.১৬ বিলিয়ন) ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে রপ্তানি তালিকায় চামড়াকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল এই খাত। আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে রপ্তানি বেড়েছিল ৩১.৬৩ শতাংশ।
কিন্তু চার মাস যেতেই সেই সুদিন ফুরিয়ে গেছে। এক ধাক্কায় পঞ্চম স্থানে নেমে এসেছে পাট খাত।
পাটকল মালিক ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা কমে গেছে। বেড়ে গেছে পলিফাইবারের চাহিদা। সে কারণে পাটপণ্যের দাম ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। সে কারণে রপ্তানিতেও ধস নেমেছে।
বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের চাহিদা না বাড়লে দামও বাড়বে না। সে কারণে আগামী দিনগুলোতে এ খাতের রপ্তানি আয় বাড়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না রপ্তানিকারকরা। জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এ খাত থেকে রপ্তানি আয় কমার আরেকটি কারণ বলে জানান তারা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। এই চার মাসের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।
এই হিসাবেই জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ২৪.১১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২৬.৬০ শতাংশ। এই চার মাসে পাটসুতা (জুট ইয়ার্ন) রপ্তানি হয়েছে ১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারের, আয় কমেছে ৩১.৩৩ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে কমেছে ৩৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে পাটসুতা রপ্তানিতে ৪১.৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। কমেছে ৩৬.৪১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ৩০.৬৪ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে বেড়েছিল ৩০.১৫ শতাংশ।
বছরের পর বছর লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি পাটকল গত বছরের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয় সরকার। সে কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো পাটকল এখন উৎপাদনে নেই। সে কারণে সরকারিভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য এখন আর রপ্তানি হয় না। অথচ বন্ধ হওয়ার আগে বিজেএমসির পাটকলগুলো থেকে এ খাতের রপ্তানির ২০ শতাংশের মতো আসত। সূত্র : নিউজবাংলা, বাংলাট্রিবিউন। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত