পরিবহন ধর্মঘট : ভোগান্তিতে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা
সুজন কৈরী : জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে পরিবহন মালিকদের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। গণপরিবহন না থাকায় দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেল, সিএনজি, রিকশায় বাড়তি ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে তাদের।
সড়ক পরিবহন মালিকদের বাস-মিনিবাস, ট্রাকসহ পণ্যবাহী গাড়ি শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে বন্ধ রয়েছে। পরিবহন শ্রমিকেরা বাস-ট্রাকসহ পণ্যবাহী গাড়ি চালাচ্ছেন না। দেশে বাস ও মিনিবাস বন্ধ রাখা হয়েছে আগাম ঘোষণা ছাড়া। শ্রম অধিদপ্তর ও বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের নেতারা বলছেন, এভাবে কৌশলে গাড়ি বন্ধ রাখা বা অবৈধ ধর্মঘট অন্যায়। তা কোনোভাবেই আইনসম্মত নয়।
এদিকে ডিজেলের দাম বাড়লেও সিএনজি ও পেট্রোলে চলা যানবাহনগুলো সুযোগ পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও যানবাহন স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি অনেকে।
শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নাজমুল বনানীর অফিসে যাতায়াতে রাইড শেয়ারিং বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। ১২০-১৫০ টাকার স্থলে শনিবার অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে ২৮০ টাকায়। বাড়তি ভাড়াতেও মোটরসাইকেল পাওয়া যায়নি। সুযোগ পেয়ে ভাড়া বেশি চাইছেন চালকরা।
শফিকুল নামের একজন বলেন, পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে কাকরাইলের ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে আসতে স্বাভাবিক সময়ে ১০ টাকা খরচ হতো তার। আজমেরী ও ভিক্টর পরিবহনে শান্তিনগর পর্যন্ত যাওয়া যায় এই ভাড়ায়। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিকশায় অনেক দরাদরির পর ১২০ টাকা দিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
পল্টন মোড়ে পথচারী রফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো জবাবদিহিতা নেই। কোটি কোটি মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে আর বিআরটিএর লোকজন সাপ্তাহিক ছুটি কাটাচ্ছে। যেদিন তেলের দাম বাড়ল তার আগে ভাড়ার বিষয় সমাধান হলে এ কষ্ট হত না।
মহাখালী এলাকায় বিএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, তিনি বাড্ডা লিংক রোড থেকে বাসে চড়ে প্রতিদিন স্কুলে যান। মহাখালী পর্যন্ত হেঁটে আসতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, কোনো বাস পাইনি। রিকশাও অনেক বেশি ভাড়া চাওয়ায় হেঁটেই এসেছি।
মহাখালী শাহজালাল কাউন্টারের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে লালন নামের একজন বলেন, শুক্রবার কিছু যাত্রী আসছিলো। শনিবার দুয়েকজন যাত্রী আসছে, কিন্তু বাস না পেয়ে ফিরে গেছে।
পারিবারিক একটা কাজে ময়মনসিংহে যেতে মিরপুরের বাসা থেকে মহাখালী বাস টার্মিনালে যান রায়হান উদ্দিন। স্ট্যান্ডে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পরও তিনি কোনো বাস না পেয়ে ফিরে যান।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী বাস টার্মিনালের ভেতরে চার শতাধিক দূরপাল্লার বাস সারিবদ্ধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এর বাইরে রাস্তায় আরও শতাধিক বাস পার্কিং করা। অধিকাংশ বাসচালক এবং তাদের সহকারীদের দেখা যায়নি। অথচ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ পরপর টার্মিনালে যাচ্ছেন যাত্রীরা। বাস চলাচল না করায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ভাড়া বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু বিআরটিএ তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তারা রোববার বৈঠক ডেকেছেন। ওই বৈঠকে ভাড়া বাড়ানো হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেবেন পরিবহন মালিকরা।
যৌক্তিক সমাধানের আগ পর্যন্ত ধর্মঘট চালানোর ঘোষণা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সাক্ষাতের পরও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা পণ্য পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেননি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, যৌক্তিক সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে না।
শনিবার দুপুরে ধর্মঘট ইস্যুতে আলোচনা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় যান মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা। সাক্ষাত শেষে বের হয়ে সমিতির অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দুল মোতালেব গণমাধ্যমকে বলেন, যৌক্তিক সমাধান পেলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে। আমরা বৈঠক শেষ করেছি। বৈঠকে ধর্মঘটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের দাবির কথা শুনেছেন এবং তিনি বলেছেন যৌক্তিক দাবিগুলো আলোচনা করে মেনে নেওয়া হবে। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের ভাড়ার ওপরে প্রভাব পড়েছে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও