ইলিশের উৎপাদন ছাড়াবে সাড়ে ৫ লাখ টন
অর্থনীতি ডেস্ক : চলতি বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুম শেষে চলছে জাটকা সংরক্ষণ। প্রজনন মৌসুমে প্রায় ৫২-৫৪ শতাংশ মা ইলিশ মাছ নদীর মোহনায় ডিম ছেড়েছে। কেজি হিসেবে প্রায় ৭.৭০-৭.৮০ কেজি বা ৭৭০-৭৮০ মেট্রিক টন ডিম ছেড়েছে। এ থেকে চলতি বছর প্রায় ৫.৭০ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ উৎপাদন হবে বলে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে।
গত বছর দেশের নদী মোহনাগুলোতে ৫১.২ শতাংশ মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। যার পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫ কেজি বা ৭৫৭ মেট্রিক টন।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের (ইলিশ) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং কেন্দ্র প্রধান ড. মো. আনিসুর রহমান জানান, ইলিশ প্রাকৃতিক সম্পদ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এর উৎপাদন বৃদ্ধি ও কমা নির্ভর করছে। তবে ইলিশ মাছ সারা বছরই কম-বেশি ডিম ছাড়ে তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে অধিকাংশ মা মাছ ডিম ছাড়ার সময়ে মিঠা পানির নদ-নদীর মোহনায় চলে আসে।
৩০ বছর ধরে ইলিশ নিয়ে গবেষণা করা এই মৎস্য বিজ্ঞানী বলেন, আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি, ২০১৮ সালে মা ইলিশ ৪৭.৭৫ শতাংশ ডিম ছেড়েছিল। পরিমাণ হিসেবে ৭ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৯ কেজি বা ৭২৮.৩৩ মেট্রিক টন। ২০১৯ সাল মা ইলিশ ৪৮.৯২ শতাংশ ডিম ছেড়েছিল। পরিমাণ হিসেবে ৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৬৮ কেজি বা ৭৪১ মেট্রিক টন।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণত ৪০ শতাংশ ইলিশ মাছ ডিম ছাড়তে পারলেই সেটাকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে আমরা এখন এ থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা করি। মা ইলিশ যে পরিমাণ ডিম ছাড়ে তার থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ডিম ফুটলে এ থেকে প্রায় ৪০-৫০ হাজার কোটি ইলিশের পোনা পাওয়া সম্ভব, যা পরবর্তী সময়ে ছোট ইলিশ বা জাটকায় পরিণত হয়ে থাকে। তবে এ বছর গত বছরের চেয়ে বেশি ডিম ছাড়বে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
ডিম থেকে পোনা উৎপাদন বিষয়ে মৎস্য গবেষক এবং সৈয়দপুর মৎস্য গবেষণা উপকেন্দ্র প্রধান ড. মো. রাশেদুল হাসান জানান, সাধারণত কৃত্রিম উপায়ে মাছের উৎপাদন করা হলে জানা সম্ভব ডিম থেকে মাছের উৎপাদন হার বা হ্যাচিংয়ের হার। ইলিশ যেহেতু লোনা ও মিঠা পানিতে বাস করে সেহেতু এগুলোর প্রাকৃতিকভাবেই ডিম ছাড়ে ও ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে। এ নিয়ে গবেষণা একবার শুরু হলেও তা শেষ করা যায়নি। এ বিষয়েও গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কৃত্রিমভাবে ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে পানি ও পরিবেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একারণে উৎপাদনের তারতম্য হয়ে থাকে। সাধারণত রুই-কাতলের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ বাচ্চা ফুটলেও ইলিশের ক্ষেত্রে অনিশ্চিত।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা বন্ধ, জাটকা রক্ষার কার্যক্রম জোরদার, অভয়াশ্রমের মা মাছ সংরক্ষণ, সাড়ে ৬ সেন্টিমিটারের নিচের ব্যাসের জাল নিষিদ্ধসহ নানা উদ্যোগ সফল হলে এ বছরও গতবারের তুলনায় বেশি ইলিশ পাবো।
গবেষক ড. মো. আনিসুর রহমান আরও বলেন, আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে দেখছি। আমাদের দেশে এই সময়ে বেশ বড় ধরনের ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ডিম ছাড়ছে। গড়ে প্রতি বছর ১৩-১৪ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ বেশি হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে উৎপাদন ৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মৎস্যবিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৫৬ হাজার টন ইলিশের উৎপাদন করা যায়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৩৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। এবং ২০২০ -২১ এ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন। সূত্র : বার্তা২৪, জাগোনিউজ। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত