মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠানোর দাবি আইন লঙ্ঘন করে জ্বালানীর দাম বাড়িয়েছে বিপিসি : ক্যাব
মো. আখতারুজ্জামান : বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) আইন লঙ্ঘন করে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সোমবার ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করেন ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটির জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি কমিশন আইন অনুযায়ী জ্বালানির দাম বাড়ানোর এখতিয়ার একমাত্র বিইআরসির। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) তেলের দাম বাড়িয়ে প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করেছে। যা শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে তিনি জানান।
শামসুল আলম বলেন, তাই অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে প্রক্রিয়া অনুসারে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসির কাছে পাঠানো হোক। তারা তাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করবে। এর আগে, ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ টাকা কার্যকর হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। তবে অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রোলের দাম আগের মতোই প্রতি লিটার ৮৬ টাকা থাকছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান।
তিনি জানান, বিপিসি রাজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত ৪৩ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ভোক্তাদের নিকট থেকে অবৈধভাবে আদায় করেছে। জ্বালানীর মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ভর্তুকি প্রদানের লক্ষ্যে এ-অর্থ দিয়ে এনার্জি প্রাইচ স্ট্যাবিলাইজড ফান্ড গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি বিপিসি’র প্রস্তাবমতে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যহার আকস্বিকভাবে এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা লিটারপ্রতি ১৫ টাকা করে বৃদ্ধি করে। বিইআরসি আইনের ৩৪(৪) উপধারা মতে পেট্রোলিয়াম পণ্যসহ সকল জ্বালানির মূল্য পক্ষগণের শুনানীর ভিত্তিতে নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসি’র। বিপিসি বিইআরসি’র লাইসেন্সী। লাইসেন্সী হিসেবে উক্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিপিসিকে উক্ত আইনের ৩৪(৬) ধারা মতে বিইআরসির নিকট পেশ করতে হবে। কিন্তু বিপিসি বিইআরসির পরিবর্তে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পেশ করে এবং জ্বালানি বিভাগ মূল্যবৃদ্ধি করে।
তাতে প্রতিভাত হয়, বিপিসি উক্ত আইনের ৩৪(৬) উপধারা লংঘন করে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ওই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগে পেশ করে। জ্বালানি বিভাগ ৩৪(৪) উপধারা লংঘন করে সে প্রস্তাব মতে মূল্যবৃদ্ধি করে। সুতরাং বিইআরসি আইন লঙ্ঘনের অপরাধে বিপিসি এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। উক্ত মূল্যবৃদ্ধির আদেশ পূণর্বিবেচনা করা জরুরি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আইনের ৪৭ ধারা মতে বিইআরসি’র।
মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগে প্রেরণ এবং জ্বালানি বিভাগ কর্তৃক সে-মূল্যবৃদ্ধি করা বিইআরসি আইনের পরিপন্থী। এই বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হলে এলপিজির মতো ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠানো হতো। কিন্তু বাস্তবে বিপিসি এবং জ্বালানি বিভাগ বিষয়টি উপস্থাপনে বিরত থেকে স্বীয় বিবেচনায় মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি বিপন্ন এবং ভোক্তাদের কাছে সরকার এখন অপ্রিয়। এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিইআরসি আইনের ৩৪(৩) উপ-ধারা মতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত মূল্যহারসমূহ বিইআরসি নির্ধারণ করবে। সে-মূল্যহার জ্বালানীর সরবরাহ ব্যয় তথা লাইসেন্সির রাজস্ব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বিগত ৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে জ্বালানী বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত লুণ্ঠনমূলক মূল্যহার বহাল রেখে বিপিসি রাজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত ৪৩ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৮ লাখ ভোক্তাদের নিকট থেকে আদায় করেছে।
অতএব এ-পরিস্থিতিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে বিইআরসি, জ্বালানি সম্পদ বিভাগ, এবং বিপিসির নিকট তিন প্রস্তাব করা হয়। প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে মূল্যহার বৃদ্ধিব প্রস্তাবটি বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারা মতে বিইআরসি কর্তৃক নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিইআরসিতে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় প্রজ্ঞাপন মতে ডিজেল ও কেরোসিনের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মূল্য পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিপিসি রাজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত ৪৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ভোক্তাদের নিকট থেকে অবৈধভাবে আদায় করেছে। জ্বালানীর মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ভর্তুকি প্রদানের লক্ষ্যে এ-অর্থ দিয়ে এনার্জি প্রাইচ স্ট্যাবিলাইজড ফান্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।