এক বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার কমেছে, বাড়েনি গ্যাসের সরবরাহ
সোহেল রহমান : দেশে গত এক বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার কমেছে। অন্যদিকে চাহিদার বিপরীতে বাড়েনি গ্যাসের সরবরাহ। ফলে দৈনিক ঘাটতির পরিমাণ কমেনি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর জুন শেষে দেশে মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার ছিল ৩২৪.১৯ কেজিও। চলতি বছর জুন শেষে এটি ৩০৯.২৬ কেজিও-তে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার কমেছে প্রায় ১৬ কেজিও।
সূত্রমতে, দেশের প্রধান জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৩ হাজার ৭০০ এমএমসিএফ। এর বিপরীতে আরএলএনজিসহ দৈনিক সরবরাহকৃত গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ১০০ এমএমসিএফ। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দৈনিক ঘাটতি ৬০০ এমএমসিএফ। এক বছর আগেও ঘাটতির পরিমাণ একই ছিল।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ) থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
চুক্তিতে ‘জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে’ দাবি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বলেছে, চাহিদা ও জাতীয় গ্রিডের চাপের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদন অব্যাহত রাখা; গৃহীত প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন; নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার; গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি; চাহিদামত এলএনজি আমদানি এবং বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এ মূহুর্তে গ্যাস খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হিসাব মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারির হিসাবে দেশের ২৭টি গ্যাস ফিল্ডে অবশিষ্ট গ্যাস মজুদের পরিমাণ হচ্ছে ১০ দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ মজুদ দ্বারা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় গ্যাসের চাহিদা পূরণে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৫০ বিলিয়ন ঘনফুট দেশজ গ্যাস উৎপাদন এবং ৪৫ লাখ মেট্রিক টন এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বলছে, দেশজ গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে ২০২৩ সালের মধ্যে নতুন নতুন অনুসন্ধান কূপ খনন, উন্নয়ন কূপ খনন ও কূপের ওয়ার্ক-ওভার করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অ-গভীর সমুদ্রাঞ্চলে দুটি ব্লকে (এসএস-০৪ ও এসএস-০৯) দুটি অনুসন্ধান কূপ খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫টি অনুসন্ধান/ উন্নয়ন/ ওয়ার্ক-ওভার কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস প্রাপ্তির লক্ষ্যে ২ডি মাল্টিক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে পরিচালনার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অন্যান্যের মধ্যে মাতারবাড়িতে একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি গ্যাস সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫০ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপ-লাইন স্থাপন ও ১০ কিলোমিটার তেল পরিবহন পাইপ-লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ-এর সাম্প্রতিক অর্জনের মধ্যে রয়েছে- ১ হাজার ৯০০ লাইন কিলোমিটার দ্বি-মাত্রিক জরিপ সম্পন্ন করা; ১টি ওয়ার্ক-ওভার রিগ ক্রয়; পেট্রোবাংলার উদ্যোগে ৫টি অনুসন্ধান কূপ খনন; উন্নয়ন কূপ খনন ও কূপের ওয়ার্ক-ওভার করা হয়েছে ১৩টি; ২৯৯ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপ-লাইন ও ৬টি গ্যাস স্টেশন স্থাপন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ২১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা ও ২৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রেক টন গ্রানাইট উত্তোলন করা হয়েছে।