‘মলনুপিরাভির’ দাম হাতের নাগালে অর্থনীতি চাঙা হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের
ভূঁইয়া আশিক রহমান : রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, করোনার ক্যাপসুল ‘মলনুপিরাভির’ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। তা না হলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। ওষুধটি নতুন এসেছে। এই ক্যাপসুল ভাইরাসের ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। কিন্তু ধ্বংস করতে পারবে না। ভাইরাস ধ্বংস করার ওষুধ বের হয়নি। ভাইরাসের সংখ্যা কমিয়ে, গুরুত্ব অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ওষুধ বিনা পয়সায় দেওয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করবে বা ব্যবহার করবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. লেলিন চৌধুরীর মতে, মলনুপিরাভির টিকার বিকল্প নয়, এটি প্রতিষেধক। কারও শরীরে করোনা প্রবেশ করলে ভাইরাসটি দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। বিভাজিত হয়। যতো দ্রুত বিভাজিত হয়, রোগীর শারীরিক অবস্থা ততো দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। করোনার এই ক্যাপসুল বংশবৃদ্ধি রোধ করবে। ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বংশবৃদ্ধি রোধ করবে। এতে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হবে না। হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ভাগ কমে যাবে। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যদি মানুষের শরীরে এন্টিবিড তৈরি করা যায়, তাহলে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই অনেকটাই এগিয়ে যাবো।
প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ধরা হয়েছে ৫০-৭০ টাকা। একজন মানুষের চিকিৎসার জন্য দিনে ৮টি করে ক্যাপসুল লাগবে। ৫ দিনে ৪০টি। ৫০ করে দাম হলে ৪০টির দাম ২ হাজার টাকা, আর ৭০ টাকা করে হলে ২৮০০ টাকা। এই টাকাটা এফোর্টেবল। সরকারি হাসপাতালে ওষুধটি ভর্তুকি দেওয়া দরকার।
যারা ওষুধটি বিক্রি করবেন, তাদের প্রতি কঠোর নির্দেশ থাকা দরকার। চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যেন ওষুধটি বিক্রি করা না হয়। তা না হলে ওষুধ নিজেই অসুখ তৈরি করে ফেলবে! এটা যেন কঠোরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। প্রতিটি মহানগর, জেলা-উপজেলায় নির্দিষ্ট কিছু দোকানে ওষুধটি সরবরাহ করা হোক। প্রয়োজন ছাড়া ওষুধটি ব্যবহার করা যাবে না। সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেরা দোকান থেকে কিনে যেন ওষুধটি না খান।
একদিকে করোনা প্রতিরোধে টিকা দেওয়া হচ্ছে, অপরদিকে ওষুধ মলনুপিরাভির মানুষের হাতের নাগালে। এই খবরে মানুষের মধ্যে ভীতি কমে আসবে। করোনায় তীব্রভাবে অসুস্থ হওয়ার পরও যদি কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতে না হয়, তাহলে কী দাঁড়ালো? ইতিবাচক খবর নিশ্চয়ই। হাসপাতালে ভর্তির সময় জাতীয় অর্থনীতির ওপর যে চাপ পড়ে, সেটি থাকবে না। মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেলে মানুষকে স্বস্তি দেবে। সার্বিকভাবে টিকা ও মলনুপিরাভির ক্যাপসুল সহজতর হওয়ায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শক্তিশালী হবে। করোনায় অসুস্থতা কমে এলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া শুরু করলে ব্যাপরটির ভিন্ন রূপও দাঁড়াতে পারে! ফলে ওষুধ ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন-এর প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, এতোদিন আমরা করোনা ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। তখন করোনার কোনো ওষুধ আমাদের হাতে ছিলো না। ভ্যাকসিনেশনের পরও করোনা চলে যায়নি। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, রাশিয়ার মতো দেশে এখনো করোনা আছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, করোনা আরও কয়েকবছর থাকবে। ফলে মলনুপিরাভির আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এই ওষুধ সেবনে করোনা রোগী গুরুতর অসুস্থ হন না। ওষুধ কার্যকর বলেই মনে হচ্ছে। মলনুপিরাভির ব্যবহারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে বাধা কমে আসবে। এতে অর্থনীতি চাঙা হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
করোনার ওষুধ মানুষের নাগালের মধ্যে আসা আমাদের জন্য বিরাট আশীর্বাদ। কারণ দেশে ৫০-৭০ টাকায় ওষুধটি বিক্রি হচ্ছে। যেখানে আমেরিকায় একটি ক্যাপসুলের দাম হচ্ছে ৭০ ডলার। ওষুধ ঠিকমতো ব্যবহার না হলে ওষুধে কাজ হবে না। যথেচ্ছ ও লাগামছাড়া ব্যবহার ডিজাস্টারও হতে পারে।