সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূত, বিআরটিএ পরিবহন মালিকদের স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত বলছেন নগরপরিকল্পনাবিদরা
ভূঁইয়া আশিক রহমান : গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী বলেন, পরিবহন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার ও পরিবহন মালিক-সমিতি, এখানে আমজনতার কোনো সম্পৃক্ততা কিংবা পাবলিকের কোনো বক্তব্য শোনা হয়েছে কিনা আমরা জানি না। পাবলিকের অসুবিধার কথা বলার কে আছেন? তাদের কথা বলার কি কোনো একটা জায়গা আছে? সরকার কি সাধারণ পাবলিককে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলো, ভাই, আপনার কীসে অসুবিধা, কী আপনার অসুবিধা? করেনি।
জনগণকেন্দ্রিক কোনো সিদ্ধান্ত যখন গ্রহণ করা হয়, তখন তাদের সম্পৃক্ত করা উচিত। এতে জনগণের সুবিধা হয়। সরকার ও পরিবহন মালিকদেরও সুবিধা হবে। সবার জন্য ব্যাপারটি অনেক বেশি সহজ। দুর্ভাগ্যবশত ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় না।
পাবলিকের স্বার্থরক্ষার জন্য একটা প্রক্রিয়া চালু করা দরকার সাংগঠনিকভাবে। তা না হলে কিছুতেই যাত্রী স্বার্থসুরক্ষা করা যাবে না। সাধারণ মানুষের স্বার্থসুরক্ষা করা না গেলে একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। সুবিবেচনায় সিদ্ধান্ত না নিলে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের তো অসুবিধা হবেই।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, নারী, শিশু, বৃদ্ধ কিংবা প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না করে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অথবা জনগণের অসুবিধা হয় এমন সিদ্ধান্ত যারা নেন, তারা গণশক্র। বিকল্প ব্যবস্থা না করে আপনারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। পরিবহন মালিক সমিতিকে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের কেউই ঢাকা মহানগরীর সিটিং সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলে তারা যা করছেন, তা কার্যকর কীভাবে হবে- কারও কোনো ধারণা নেই। বিআরটিএ বলছে, তারা কার্যকর করবে না। কারণ তাদের কোনো ম্যাজিস্টেট নেই। তাহলে কে করবে? পরিবহন মালিক সমিতি? আসলে এটা জনগণকে চাপ দিয়ে বিভিন্ন রকম ভাড়া বাড়ানো। ভাড়া বাড়ানোর দৃষ্টিটা সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ বলেন, মটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই। আসন অনুযায়ী বা স্ট্যান্ডিং যাত্রী নেবেÑএটাই স্বাভাবিক মেট্টো এলাকায়। পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারণত দুই-তিন ঘণ্টা রাস্তায় থাকে। পরে সেই আইন থাকে না। মুখে অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু বাস্তবায়ন অনেক কঠিন কাজ। যেমন সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, কোনো রুটেই তো তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। সারাদেশে ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। যে পরিমাণ ভ্রাম্যমান আদালত আছেডিএমপি বা জেলা প্রশাসনের, কার্যকরভাবে মনিটর করা সম্ভব হয়ে উঠে না। বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমান আদালত সকাল এগারোটায় বসে, দুপুর একটা-দুইটার পর চলে আসে। এরপর তো সকলে ফ্রি!
সংকট সমাধানে গণপরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। গণপরিবহন মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতের মধ্যে আছে। ছোট কোম্পানিগুলো ব্যবসা করতে পারে না। বড় বড় কোম্পানির হাতে ব্যবসা। সরকার যদি গণপরিবহন বাড়ায়, যাত্রীদের সংকট দূর হবে।
সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী কিংবা বয়স্ক নারগরিকদের জন্য কষ্টকর হবে। তারা লোকাল বাসে উঠতে-নামতে গিয়ে ভীষণ রকমের অসুবিধায় পড়বেন। পরিবহন শ্রমিক নেতারাই পরিবহনের মালিক। পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বিআরটিএ’র একটা সখ্যতা আছে। বিভিন্ন রকম চাপও আছে। চাপে পড়ে বায়াসড হয়ে যায়। জনগণের অবস্থা চিন্তা করে না বিআরটিএ।