ডিএসইতে ২৭৩ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এ বিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, টানা তিনদিন শেয়ারবাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে বাজারে মূল্য সংশোধন হয়েছে।
সার্বিকভাবে বাজারে এখন এমন দরপতনের কোনো কারণ দেখছি না। এভাবে দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এই দর পতনের আগে বাজার কিন্তু অনেকটাই উঠেছে। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজার খুবই সেনসিটিভ। যেকোন বিষয় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর কোনো কারণে বাজারে একটু দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। সবাই তখন বিক্রি করতে চায়। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে গিয়ে পতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এখনো হয়তো সেটাই হচ্ছে।
এদিকে দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতিও কমে গেছে। এবিষয়ে বিনিয়োগকারী আক্তারুজ্জামান বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর সম্প্রতি শেয়ারবাজার অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এতে বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি। কিন্তু গত কয়েকদিনের দরপতনে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছি। বাজারে প্রতিদিন যে হারে পতন হচ্ছে তাতে আবারও পুঁজি হারানোর শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছি।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের প্রথম চার মিনিটেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু শুরুর এই বড় উত্থান প্রবণতা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। প্রথম আধা ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই লেনদেনে অংশ নেওয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে থাকে। এতে দেখতে দেখতেই ঋণাত্মক হয়ে পড়ে মূল্যসূচক। লেনদেনের শেষ দিকে এসে পতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ফলে বড় দরপতন দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৯৩০ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৪ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৬৫৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইতে দিনভর লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭৩টির। আর ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৫০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন কমেছে ৩৯৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫৪ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের ৬৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আইএফআইসি ব্যাংক, জিনেক্স ইনফোসিস, সাইফ পাওয়ারটেক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, এনআরবিসি ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ ও ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৯টির ও ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও