দেশের ১৫ আমদানিকারকের নিয়ন্ত্রণে সার
মো. আখতারুজ্জামান : বেশ কিছু দিন ধরে ৮ থেকে ১০টি জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সার না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার মজুত রয়েছে। শ্রমিক সংকটে সরকার সরবরাহে সমস্যা হওয়ায় ১০ জেলায় কয়েকদিন সার সংকট দেখা দেয়, যা বর্তামনে নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)।
অন্যদিকে কৃষকেরা যেন সহজে হাতের নাগালে সঠিক দামে সার কিনতে পারেন, এ জন্য সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে সারের ডিলার নিয়োগ করে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে তারা সার বিক্রি করছেন না। বিক্রি করছেন শহরে। এতে সার পেতে কৃষকদের ভোগান্তিসহ অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং বিভাগের উপপ্রধান শেখ বদিউল আলম জানান, বেশ কয়েকটি স্থানে সারের কিছু ডিলার সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছিলো। আমরা জেলা প্রশাসনকদের চিঠি দিয়ে এসব ডিলারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জানিয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য এসেছে বিভিন্ন জেলায় বেশি দামে সার বিক্রির অপরাধে বেশি কয়েকজন ডিলারের লাইসেন্স বাতিলসহ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। তবে এখনও বিস্তারিত তথ্য না আসায় সঠিক সংখ্যাটি বলতে পারেনি তিনি।
বিসিআইসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে শ্রমিক সংকটের ফলে কয়েকটি জেলার ডিলারের কাছে সার পৌঁছানো যায়নি। ফলে সার সরবরাহ কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়। তবে পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে বলে বিসিআইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সার আমদানিকারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, বর্তমানে ইউরিয়া সারের মজুদ রয়েছে ৮ লাখ টন। আগামী বছর মার্চ মাসের মধ্যে ১৩ লাখ টন আসবে। দেশে ইউরিয়া সারের মোট চাহিদা ২৬ লাখ টন। বেসরকারিভাবে ননইউরিয়া সার আমদানির যে অনুমোদন রয়েছে তার মধ্যে টিএসপি ৩ লাখ টন, এমওপি ৩ লাখ টন, ডিএপি ৮ লাখ টন। এর মধ্যে টিএসপি এবং এমওপি দেশে চলে এসেছে। ডিএপি ৫ লাখ টন এসেছে।
এ বছর নন-ইউরিয়া সার আমদানিতে ৩২ প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয় সরকার। ভর্তুকি পাওয়া এই ৩২ কোম্পানির মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একজন। তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একজন। দুটি করে কোম্পানির মালিক একজন। ১০ থেকে ২০ জনের মতো আমদানিকারক রয়েছেন। মূলত তারাই সারের দাম বাড়িয়েছেন। কোনো ছোট ডিলার যদি দাম বাড়াত, তাহলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সারের দাম বাড়ত। কিন্তু সারাদেশেই যেহেতু সারের দাম বেড়েছে, এই দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারক ছাড়া অন্য কারও হাত নেই। বর্তমানে নন-ইউরিয়া সারের দাম বেশি। ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার এমওপি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা বস্তায়।
জানা যায়, (সিইউএফএল) কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার (কাফকো), ডাই অ্যামুনিয়া ফসফেট (ডিএপি) ও পতেঙ্গার ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) কারখানাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের কারখানা থেকে সারাদেশে সার সরবরাহ করা হয়। দেশে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সারের ডিলার রয়েছেন। চাহিদা অনুযায়ী তাদের সার বরাদ্দ দিত বিসিআইসি। ডিলাররা নিজস্ব খরচে কারখানা গেট থেকে নিজ নিজ জেলা বা এলাকায় সার পরিবহণ করে নিয়ে যেতেন। তা সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকের হাতে পৌঁছে দিতেন।
সূত্র জানায়, নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরই ইউরিয়া সার পরিবহণের কাজটি বিসিআইসি টেন্ডারের মাধ্যমে কয়েকটি সিন্ডিকেটকে দিয়ে দেয়। এবার টিএসপি ও ডিএপি সার পরিবহণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর বিআরটিসিকে দায়িত্ব দেয়। এখন আপৎকালীন মজুতের জন্য বিভিন্ন জেলায় সরকারের যে বাফার গুদাম রয়েছে। সেসব গুদামে কারখানা থেকে বা আমদানি করা সার পরিবহণ করে নিয়ে মজুত রাখা হচ্ছে। সেসব গুদাম থেকেই বিসিআইসির বরাদ্দ অনুযায়ী ডিলাররা সার উত্তোলন করে তা নিজ নিজ জেলায় নিয়ে খুচরা পর্যায়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করছেন।
গত ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনকে (বিসিআইসি) ৬০৫ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদনসহ সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সৌদি আরবের বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরশেন থেকে ২০৬ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় ৩০ হাজার টন, ২০০ কোটি ৩১ লাখ ২৮ হাজার ৫৭৫ টাকায় ৩০ হাজার টন ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে ১৯৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকায় আরও ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি করবে বিসিআইসি।