কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন মোদি
শোভন দত্ত : কৃষকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সামনে অবশেষে হার মানলো বিজেপি সরকার। বিতর্কিত সেই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, এতদিনের দুর্ভোগের কারণে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
মোদী আরো বলেন, আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাদের হয়তো তপস্যাতেই খামতি ছিল। তাই কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ মাসে শুরু হতে চলা সংসদ অধিবেশনে আইনগুলো প্রত্যাহার করা হবে। সবাইকে অনুরোধ করছি, আসুন, আন্দোলন ছেড়ে নতুন দিনের সূচনা করি। এবার আপনারা মাঠে ফিরে যান, পরিবারের কাছে যান।
তিনি বলেন, দেশের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন ক্ষুদ্র কৃষক। তাদের জমির পরিমাণ দুই হেক্টরের কম। তাদের জীবনের আধার এই ছোট জমিটুকু। এমন কৃষক রয়েছে প্রায় ১০ কোটি। এই ছোট জমিতেই তারা নিজেদের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে কাজ করছে। তাই বীজ, বীমা, বাজার আর সেভিংসের ক্ষেত্রে কাজ করেছি। আমরা ফসল বীমা যোজনাকে আরও কার্যকরী করেছি। পশুপালন ও মাছচাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকরা কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। কৃষককদের সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার কাজ করছে।
মোদী বলেন, দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের কথা ভেবেই তিনটি কৃষি বিল আনা হয়েছিল। দেশের কৃষক সংগঠন, কৃষি অর্থনীতিবিদদের এই দাবি বহুদিনের। আগের সরকারও এ নিয়ে ভেবেছে। এরপরই সংসদে কৃষি বিল নিয়ে আলোচনা করে তা পাস করানো হয়। কয়েক কোটি কৃষক এই বিলকে সমর্থন জানিয়েছেন। ভালো মনে এই আইন আনা হয়েছিল। কৃষকদের স্বার্থে আনা এই বিল আমরা কয়েকজনকে বোঝাতে পারিনি। সেই কয়েকজন কৃষকই এর বিরোধিতা করছেন। তবু সেটিও আমাদের জন্য বড় বিষয়। তাদের বোঝাতে চেয়েছি, আমরাও তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করেছি। সরকার আইন বদলাতে রাজি ছিল। এর মধ্যেই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে চলে যায়।
এর আগে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন স্থগিত রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশনা দেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘কৃষকদের প্রতি বিজেপি নৃশংস। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে সমস্ত কৃষক লড়াই করে গিয়েছেন তাদের সকলকে আমার হার্দিক অভিনন্দন। এই লড়াইয়ে যাদের প্রাণ গিয়েছে তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। এই জয় আপনাদের’।
কৃষকদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, এই জয় তাদেরই। আন্দোলনে অনড় মনোভাব দেখানোয় দেশের শাসকদল এমন সিদ্ধান্তে এসেছে। এতে বিরোধীরা জয় দেখেছেন। গণতন্ত্রের এমন জয়ের কথা বলতে গিয়ে কেন্দ্রের শাসকদলকে খোঁচা দিয়েছেন রাজ্যের শাসকদল।
এদিকে তৃণমূলের আরেকজন সাংসদ সুখেন্দশেখর একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। নির্বাচনের চাপে পরেই বিজেপি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আসন্ন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের কথা চিন্তা করে মোদী সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা হারতে চলেছে বিষয়টি বুঝতে পেরেই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দেড়ি করে হলেও তারা বুঝতে পেরেছে’।
তৃণমূলের ওপর একজন সাংসদ সৌগত রায় বিজেপি-কে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, এই আইনের প্রত্যাহার মূলত দেশের গণতন্ত্রের জয়। তিনি বলেন, ‘দিল্লির সীমানায় এক বছর সময় ধরে আন্দোলন চালিয়েছেন কৃষকেরা। বিজেপি সরকারের অনেক চেষ্টার পরেও তারা কৃষকদের হারাতে পারেনি। এটাই গণতান্ত্রিক শক্তি’। সেই সাথে বিজেপি-র উদ্দেশ্যে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘সামনে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনে ভরাডুবির ভয়েই বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছে মোদী সরকার’। সাংসদের অধিবেশনে বিক্ষোভ এড়াতেই আগেভাগে এই ঘোষণা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেন, দেশের অন্নদাতা কৃষকদের সত্যাগ্রহের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হলো সরকার। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা জিতলেন। জয় হিন্দ, জয় হিন্দের কৃষক।
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একাংশ মনে করেন, শিখ ধর্মের প্রবক্তা গুরু নানকের জন্মদিনে মোদির এই ঘোষণা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। দিল্লিতে অবস্থানকারী কৃষকদের বড় অংশই পাঞ্জাব ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের। তাদের মধ্যে শিখ ও জাঠ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক। আগামী বছরের শুরুতেই পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট।
২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সংসদে কৃষি আইন পাশ করে বিজেপি সরকার। মোট তিনটি বিষয়ে সেখানে পুরনো কৃষি আইনের আমূল পরিবর্তন করা হয়েছিল।
ওই তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ভারতে বহুদিন ধরে আন্দোলন করছেন কৃষকরা। আন্দোলন-বিক্ষোভে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। তবু রাজপথ ছাড়েননি কৃষকরা। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে, তবে বিষয়টির সুরাহা হয়নি। করোনা মহামারির মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যান কৃষকরা। অবশেষে তাদের দাবি মেনে নিলো মোদী সরকার। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভি।