নিজেকে বাঁচাতে গগনবিদারী চিৎকার করেছিল হাতিটি ১০ দিনের ব্যবধানে শেরপুরে ফের বন্যহাতির মৃত্যু
অর্থনীতি ডেস্ক : বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে শেরপুরে আরও একটি হাতি হত্যা করা হয়েছে। হাতিটি যখন বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে, তখন নিজেকে বাঁচাতে গগণবিদারী চিৎকার করছিল।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তের পানিহাতা গ্রামের ফেকামারির পাহাড়ঘেরা একটি সমতল ভূমিতে ফাঁদ পেতে হাতিটিকে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে হাতিটির মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ।
ঘটনার আগের দিন বন্যহাতির ছবি তুলতে শেরপুরে গিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান। ঘটনাস্থল থেকে তিনি জানান, আলামত দেখে এটি স্পষ্ট য়ে হাতিটিকে জেনারেটরের বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে হত্যা করা হয়েছে। হাতিটির শুড় বিদ্যুতের শকে পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, গতরাত ১২টার দিকে স্থানীয়রা হাতিটির গগনবিদারী চিৎকার শুনেছে। এর অর্থ ওই সময়েই হাতিটি ফাঁদে পড়েছিল।
ড. মনিরুল বলেন, সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সদ্যমৃত হাতির পাশে একটি গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এর মানে দাঁড়ায় হাতিটি হত্যার পর গর্ত খুড়ে এটিকে মাটিচাপা দিয়ে হত্যার ঘটনাকে লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে মাটিচাপা দেবার আগেই হয়তো ভোর হয়ে গিয়েছিল। তাই কাজটি অসমাপ্ত রেখেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে হত্যাকারীরা।
তিনি জানান, মৃত হাতিটির বয়স আনুমানিক পাঁচ বছর। এটি একটি পুরুষ হাতিশাবক। এদিকে হাতি হত্যার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক জহির আকন বলেন, স্থানীয় বন কর্মকর্তারা সেখানে আছেন। আমরাও ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশবাদী সংগঠন বার্ড কনজারভেশন অব শেরপুরের সভাপতি সুজয় মালাকার জানান, হাতিটির বয়স আনুমানিক ২ বছর হবে। হাতিটি পুরুষ এবং মাত্র দাঁত উঠতে শুরু করেছে। হাতির মরদেহটি স্থানীয়রা গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিতে চেষ্টা করছিল। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।
বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের গোপালপুর বিট কর্মকর্তা মো. শাহ্ আলম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ইতোমধ্যে মৃত হাতিটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হাতিটি অসুস্থ হয়ে মারা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাতিটি কীভাবে মারা গেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এর আগে গত ৯ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন গারো পাহাড় এলাকায় বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে একটি হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে শ্রীবরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হলেও বিদ্যুতের ফাঁদে হাতি মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণিত হলে ১১ নভেম্বর চারজনের নামে মামলা করেন শ্রীবরদী রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এর আগে গত বছরও শ্রীবরদী উপজেলার খাড়ামোড়া সীমান্তে একটি হাতি বিদ্যুতের ফাঁদ হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২১ সালের এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৭৩টি হাতি মারা গেছে। শুধু ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত শুধু শেরপুরে ২৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে, যার বেশিরভাগই বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এসব হত্যাকা- ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে বন বিভাগ।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৬ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত ১৪ দিনের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬টি বন্যহাতি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এভাবে একের পর এক হাতি হত্যার ঘটনা প্রাণীটির বিলুপ্তির আলামত হিসেবেই দেখছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। সূত্র : সময়নিউজ অনলাইন, ঢাকা পোস্ট। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত।