জলবায়ু সম্মেলনে হতাশার পাশাপাশি অগ্রগতিও রয়েছে
আসাদুজ্জামান সম্রাট , গ্লাসগো থেকে ফিরে : সদ্য সমাপ্ত বিশ্বজলবায়ু সম্মেলনে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ায় যেমন হতাশা রয়েছে। তেমনি কিছু কিছু বিষয়ে অগ্রগতিও হয়েছে বলে মনে করছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে কিছু কিছু পদক্ষেপ অনেক আশার সঞ্চার করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের মূল সংকট তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ শতকে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির বেশি বাড়লে বিশ্বে মারাত্মক খাদ্যঘাটতি দেখা দেবে। শিল্প বিপ্লব পূর্ব সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি যেন না বাড়ে, সেজন্য শীর্ষ গ্যাস উদগীরণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আশা করা হয়েছিল এবারের সম্মেলন থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি মিলেছে সেখানে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
কপ২৬ সম্মেলনে অংশ নেয়া পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, ২০২১ সালে উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা ১.৭ থেকে ২.৭ পর্যন্ত হয়। যেটা অর্জিত হয়েছে প্রত্যেকটা দেশ তাদের টার্গেট রিভাইস করতে রাজী হয়েছে। কিন্তু এখনো টার্গেটটা পর্যাপ্ত নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এখন উদগীরনকারী প্রধান দেশ হলো, চীন, তারপর যুক্তরাষ্ট্র এবং তারপর ভারত। চীন এবং ভারত রাজি হয়নি কমাতে। এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত এসেছে সেটি একেবারে হতাশাজনক বলা যায় না।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হলো দরিদ্র দেশ ও তাদের জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সহায়তা দিতে প্যারিস চুক্তিতে বলা হয়েছিল ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১শ বিলিয়ন ডলার একটি তহবিলের নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু এখনো সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এবারের সম্মেলন থেকে ১শ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের সময়সীমা দেয়া হয়েছে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির জায়গায় এখন পর্যন্ত ৭০-৮০ বিলিয়নের মতো জোগাড় হয়েছে। আমার বক্তব্য হচ্ছে প্রতিবছর ৭০-৮০ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর অ্যাবজর্ব করার ক্ষমতা দরিদ্র দেশগুলোর নেই।
এবারের সম্মেলনে লস অ্যন্ড ড্যামেজ ফান্ড সৃষ্টি করে ক্ষতিপূরণের পেতে বিপন্ন দেশগুলোর একটি প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু এই তহবিলের প্রতিশ্রুতি না মেলায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলন শেষে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. সালিমুল হক কড়া ভাষায় এর নিন্দা করেন। তার ভাষায়, ঝুকিপূর্ণ এবং গরিব দেশগুলো এই ক্ষতিপূরণের জন্য এসেছিল। কিন্তু তাদের মুখে চড় মারা হয়েছে। আমি হতাশ না ক্ষুব্ধ, হতাশ বললে কম বলা হবে।
এবারের সম্মেলন থেকে জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসার একটা প্রতিশ্রতির প্রত্যাশা করেছিল সবাই। খসড়া চুক্তিতে ২০৫০ সালের পর কয়লা ফেইজ আউট হবে এমন ভাষা পরিবর্তন করে ফেইস ডাউন ব্যবহার করা হয়েছে। এর পেছনে ছিল ভারত ও চীনের বিরোধীতা। ভারত ও চীনের বিরোধীতায় শেষ মুহূর্তে কয়লার ব্যবহার নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়।
সম্মেলন শেষে জলবায়ু বিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনার ফ্রানস টিমারম্যানস তার প্রতিক্রিয়া বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত ছিলাম কয়লা ফেইজ আউট শব্দ ব্যবহারের কারণে। কিন্তু তারপরও যেটা হলো আমি বলবো ২৪ ক্যারটের পরিবর্তে ১৮ ক্যারট গোল্ড। তবুও এটি স্বর্ণ। অর্থাৎ জ্বালানি হিসেবে কয়লা থেকে সরে আসার ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ এটি।
এবারের সম্মেলনে আশাব্যঞ্জক যেসব সিদ্ধান্ত তার মধ্যে অভিযোজনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয়টি অন্যতম বলে মনের করেন বিশেষজ্ঞরা। প্যারিস চুক্তিতে অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা হলো অভিযোজন বা অ্যাডাপটেশনের লক্ষ্যামাত্রা। এটা নিয়ে এবারই প্রথম কথাবার্তা শুরু হয়েছে। প্রতিটি দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলা এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, আমি মনে করি গ্লাসগো মিটিং সফল হয়েছে। যদিও বহু সিভিল সোসাইটি লিডার বলবেন এটা সফল হয়নি অনেক গ্যাপ আছে। আমার মতে এ সম্মেলন থেকে অনেক দূর এগিয়েছে। সম্মেলনে ৫০ ধরনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে দু’একটি বিষয় বেশি উচ্চারিত হয়েছে। তবে প্রতিটি বিষয়ই ছিল গুরুত্বপূর্ণ।