বিশ্ববাজারে কমছে জ¦ালানি তেলের দাম কমানো হোক দেশেও, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ভূঁইয়া আশিক রহমান : বিশ^বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও হান্টিং অয়েলের দাম সাড়ে ৪ শতাংশ কমেছে। এর মধ্য দিয়ে টানা দুই সপ্তাহ বিশ^বাজারে তেলের দাম কমলো। এক মাসে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। বিশ^বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখন সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থানে নেমেছে।
চলতি বছর দফায় দফায় তেলের দাম বাড়ায় অক্টোবরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৪ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বিশ^বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়ে দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিশ^বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম কমলো, বাংলাদেশ এখন কী করবে?
এ ব্যাপারে ক্যাবের জ¦ালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বিগত বছরগুলো চল্লিশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা মুনাফা করা হলো। অথচ এগারোশো কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে না। এটা ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি। এটি একটি রাষ্ট্র বা সরকারের দর্শন হতে পারে না। সরকারি খাতগুলো এখন ব্যবসায়ী খাতে পরিণত হয়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ী মনোবৃত্তি নিয়ে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে নানান কৌশলে লুণ্ঠনমূলক মুনাফায় ব্যস্ত হয়ে গেছে। সরকার তার পলিসির জায়গাগুলোতে সংস্কার প্রয়োজন। এখনই যদি নজর না দিই, সিরিয়াস না হই- তাহলে আমাদের দুর্গতি অবশ্যম্ভাবী।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির উদ্দেশ্য ছিলো বাসভাড়া বাড়ানো। বাস মালিকরা ধরেছেন, ফলে জ¦ালানি তেলের দাম বেড়েছে। এখন আন্দোলন করলে হয়তো জ¦ালানি তেলের দাম কমানো যাবে, কিন্তু বাসভাড়া তো কমবে না। ডিজেলের বাস হলে বাসভাড়া বাড়বে, অন্য তেলে চললে ভাড়া বাড়বে নাÑ এটা কি নিশ্চিত করছে কেউ? ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কথামতো সরকার যা ইচ্ছা তা করবে, তাই করে গেছেÑকিন্তু প্রতিবাদ নেই।
দেশে জ¦ালানি তেলের দাম অনেক কমিয়ে দেওয়া উচিত। বিশে^র বহু দেশে কোভিডের পর ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সরকার ভর্তুতি নয়, উল্টো হচ্ছে। এখানে কি অর্থনীতি আছে? ব্যবসা-বাণিজ্য আছে? চাকরি নেই অনেকের। চাকরি পাচ্ছে না। ছাঁটাইও হচ্ছে। শিল্পকারখানাগুলো অর্ধেক চালাচ্ছে। মানে লোক ছাঁটাই করা হচ্ছে।
সিপিবির অন্যতম সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ডিজেল-কেরোসিন এমন এক পণ্য, যা জনস্বার্থে ব্যবহৃত হয়। এসবের দাম বৃদ্ধি মানে পণ্যপরিবহন, বাসভাড়া, ছোট শিল্প কলকারখানা ও বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। সাধারণ জনগণের পকেট ফতুর হতে থাকে। আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যা জনগণের সক্ষমতার আওতায় থাকে। যদি বেশি দামে কিনতে হয়, তাহলে সরকারকে ভর্তুকি দিয়েই তা পরিচালনা করা উচিত।
জ¦ালানি তেলের যদি দাম অনেক বেড়ে যায়, তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে পারি। জ¦ালানি খাতে অপচয়, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেÑতা বন্ধ করতে পারি, তাহলে জ¦ালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে একটা সাশ্রয়ী অবস্থান নিতে পারি। এটা বাস্তবায়ন নির্ভর করে সরকারের নীতির ওপর। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়Ñ এবার সরকারের পক্ষ থেকে অন্যায় ও গণবিরোধী আচরণ করা হলো। কারণ যখন জ¦ালানি তেলের দাম কমছিলো, তখন প্রায় তেতাল্লিশ-চুয়াল্লিশ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছিলো জনগণের পকেট কেটে রেখে দিলো। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লো, দাম ঠিক না রেখে বাড়িয়ে দেওয়া হলো।জনগণের ওপর খরচের বোঝা চাপানো হলো। অথচ কোভিডের কারণে জনগণ দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে আছে। সরকার তাদের কষ্ট বিবেচনায় নিলো না।
বিশ^বাজারে এখন জ¦ালানি তেলের দাম কমছে, অনতিবিলম্বে দেশে তেলের দাম কমিয়ে দেওয়া উচিত। তেলের দাম কমানোর পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে, পণ্যপরিবহন, বাসভাড়া ও জাহাজের ভাড়া আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। সরকার কি জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করবে, নাকি ব্যবসায়ী ও লুটেরাদের প্রতি? সরকার যদি ব্যবসায়ী ও লুটেরাদের স্বার্থরক্ষা করে চলে তাহলে তো তেলের দাম কমাবে না। জনগণের স্বার্থরক্ষা করতে চাইলে জ¦ালানি তেলের কমাবে। তেলের দাম কমানোর জন্য জনগণকে রাস্তায় প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।