রাজধানীতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ-ভাংচুরে
শরীফ শাওন : হাফ ভাড়ার দাবিতে আজও রাজধানীতে বাস চালক ও সহাকারীদের সঙ্গে বাকবি-ায় জড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে সড়ক অবরোধ ও বাস ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। দিনে দিনে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। বিআরটিএ সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে এ নিয়ে অংশিজনদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, লিখিত অকারে তা সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। সেখান থেকে দ্রুতই একটি সিদ্ধান্ত আসবে।
সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরা রুটের স্বাধীন পরিবহনের একটি বাস চালকের সঙ্গে মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাসভাড়া নিয়ে বাকবিত-ার সৃষ্টি হয়। পরে বেলা পৌনে ১১টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী বাস ভাংচুর করে বিক্ষোভ শুরু করলে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগানের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে সড়ক অবরোধ করলে রাস্তার দুপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
বিকেল ৪টায় তরঙ্গ প্লাস কোম্পানির বাস চালক ও সহকারীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের বাকবিত-ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই শিক্ষার্থকে মারধর করা হলে তারা একই কোম্পানির দুটি বাস আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। এছাড়াও প্রজাপতি পরিবহনে বাস ভাড়া নিয়ে বাকবি-ায় বাস ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ জানানো হয়। সেখানেও সড়কে যাত্রী ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে হাফ ভাড়া নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন বাস চালক ও সহকারি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচারণ, অকথ্য ভাষায় গালাগালি, বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া এবং রোববার এক ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ ওঠে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ জানিয়েছেন অর্ধেক ভাড়া আদায় নিয়মের মধ্যে নেই, বেসরকারি বাসে এমন কোন কন্ডিশনও সরকার রাখেনি। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার সিদ্ধান্ত সরকারি বাসে কার্যকর হতে পারে। অথবা সরকারি ভর্তুকি দিলে বিষয়টি চিন্তা করা হবে।
সূত্র জানায়, রোববার এ বিষয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তা অংশীজনদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। সেখান থেকে দ্রুতই সিদ্ধান্ত আকারে জানানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ ভর্তুকির বিষয়টি উপস্থাপন করেন। বৈঠকে আরও জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল সংখ্যা রয়েছে। আবার প্রকৃত শিক্ষার্থীর বাইরেও অনেকে বিভিন্ন কোর্সে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থী দাবি করেন। এছাড়াও অনেকে ভুয়া শিক্ষার্থী কার্ডের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নিতে পারেন।
বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থীদের হাফ পাশ নিয়ে সরকারের কোন নীতিমালা বা আইন না থাকলেও এটি দীর্ঘদিনের প্রচলিত নীতিতে পরিনত হয়েছে। আগে বাস মালিকরা সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে এ সুযোগ দিতো, আবার অনেক সময় তাদের উপর তা চাপিয়ে দেওয়া হতো।
শিক্ষার্থীদের এ দাবি জনপ্রিয় জানিয়ে তিনি বলেন, দাবিটি খুবই যৌক্তিক। তবে পরিবহন মালিকের দৈনিক জমা, জ্বালানি খরচ, সড়কে মামলাসহ আনুসাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে বিপুল পরিমান শিক্ষার্থীর হাফ পাশের দাবি মানা অসম্ভব।
রাজনীতি ও সমাজনীতি জড়িত থাকায় বিষয়টি খুবই জটিল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টি সামাধন করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর নতুন নির্ধরিত বাস ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায় নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে বাস চালক ও সহকারিদের প্রতিদিন বাকবিত-ার ঘটনা ঘটে। সরকার নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও যাত্রীদের অভিযোগ, কথিত সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বাস কর্তৃপক্ষ। কিলোমিটার অনুযায়ী ভাড়া না নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
সরকারের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, প্রতি কিলোমিটারে দূরপাল্লার বাসে ১.৪২ এর বদল নতুন ভাড়া ১.৮০ টাকা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ক্ষেত্রে ১.৭০ টাকার জায়গায় ২.১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বনি¤œ ভাড়া বাসে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা হবে। এতে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়ল ২৭ শতাংশ, মহানগরের বাসের ভাড়া বাড়ল ২৬.৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে গড় ভাড়া বাড়ল ২৬.৭৫ শতাংশ।
যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের বিষয়ে সরকারি ঐ কর্মকর্তা জানান, একটা নির্দিষ্ট সময় আমরা পরিবহণে চড়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। তারা সারাদিন সেখানেই কাজ করেন। আবার তাদের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে কোন পরিবেশে তারা বড় হয়েছে। সহজ কাজ হিসেবে তারা বাস চালক বা সহকারী হিসেবে কাজটি বেছে নেন, এতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনিয়তা নেই। তবে তাদের বেড়ে ওঠা মন মানষিকতা এবং শ্রেণি বৈষম্য নিয়ে কোন গবেষণা নেই। অসদাচরেন বিষয়টির সমাধান করতে হলে মূলত সমস্যার গোড়াতে যেতে হবে।