একনেকে ৭টি নতুন ও ৩টি প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ১৫,৮৭০ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধিসহ মোট ১০টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’ (একনেক)। এর মধ্যে ৭টি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২৩৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বৈঠকে অনুমোদিত অবশিষ্ট ৩টি প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাবের একটিতে ব্যয় কমেছে ১৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং অপর দুটিতে ব্যয় বেড়েছে ১৬ হাজার ১১০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু ‘মাতারবাড়ি ২ ী ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট’-এর প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবেই ব্যয় বাড়ছে ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে ‘মাতারবাড়ি ২ ী ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট’-এর প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে সাড়ে তিন বছর। মূল প্রস্তাবে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। সংশোধিত প্রস্তাবে সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাতারবাড়ি প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ি বন্দর হওয়ার কারণে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এই বন্দরটি চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে।’ প্রসঙ্গত: দাতাসংস্থা জাইকা’র অর্থায়নে মাতারবাড়ি প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে সংশোধিত প্রস্তাবে জাইকা’র অর্থায়নের পরিমাণ ১৪ হাজার ৯৮১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বাড়ছে। মূল প্রস্তাবে ঋণের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এখন এটি বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
একই সঙ্গে সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পে সরকারি অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ছে ১ হাজার ৪৭৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মূল প্রস্তাবে সরকারি অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, এখন এটি বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ৪০৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ৫৯১ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। মূল প্রস্তাবে অর্থায়নের প্রস্তাব ছিল ২ হাজার ১১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, এটি কমিয়ে ১ হাজার ৫২৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠকে অনুমোদিত ৭টি নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ চায়নার অর্থায়নে ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ডিজিটাল যোগাযোগ স্থাপন প্রকল্প’ (চীনা ঋণ ৩,৩৭৮.৫৮ কোটি টাকা ও সরকারি অর্থায়ন ২,৫০৫.১৬ কোটি টাকা; প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত); ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ (বাস্তবায়নকাল ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত); ১ হাজার ৬৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৫০৬) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প’ ( বাস্তবায়নকাল ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত); ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন প্রকল্প’ (বাস্তবায়নকাল ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত); ৭৫৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (কম্পোনেন্ট-১)(বিডব্লিউডিবি অংশ)’ (বাস্তবায়নকাল ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত); ১৭৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক (এন-৮০৬) প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’; (বাস্তবায়নকাল ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত); ১১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের মাধ্যমে মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ প্রকল্প’; (বাস্তবায়নকাল ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত)।
‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘হাওর অঞ্চল দীর্ঘদিন পিছিয়ে ছিল। এখন আওয়ামী লীগ সরকার গুরুত্ব দিয়েছে।’ সম্পাদনা : শোভন দত্ত