স্বেচ্ছা কর প্রদান, বন্ড-লটারির টিকিট বিক্রির অর্থে সমৃদ্ধ হচ্ছে মিয়ানমার ঐক্য সরকারের তহবিল
ইমরুল শাহেদ : মিয়ানমারের চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য জাতীয় ঐক্য সরকার একটি তহবিল গঠন করেছে। এই তহবিলের বিশেষ কোনো নাম রাখা হয়নি। বলা হয়েছে, ‘রিভলিউশনারি ম্যুভমেন্ট’-কে এগিয়ে নেওয়ার তহবিল। এ ব্যাপারে ঐক্য সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনভাবে এই তহবিলে অর্থ প্রদান করা যাবে। সর্বশেষ পদক্ষেপ হলো, বন্ড বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা।
ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বন্ডের দাম রাখ হয়েছে ১০০, ৫০০, ১,০০০ ও ৫,০০০ হাজার মার্কিন ডলার। বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এ মাসের শুরুর দিকে। মঙ্গলবার সকালে ঐক্য সরকারের পাবলিক ভয়েস টেলিভিশন ঘোষণা করেছে, আগের দিন সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় বিক্রি পৌঁছে যায় ৬.৩ মিলিয়ন ডলারের কোঠায়। প্রথম দুই ঘন্টায়ই সংগ্রহ হয়েছে ২ মিলিয়ন ডলার। পাবলিক ভয়েস টেলিভিশনে বলা হয়, ‘জনগণের এই সাড়া থেকে বুঝা যায়, তারা দেশ থেকে স্বৈরাচার উৎখাত করতে চায়।’ বন্ড বিক্রি ছাড়াও আরো দুই উপায়ে জনগণ এই তহবিলকে সহায়তা প্রদান করতে পারেন। সেটা হলো লটারি টিকিট ক্রয় ও স্বেচ্ছা কর প্রদানের মাধ্যমে।
ঐক্য সরকারের পরিকল্পনা, অর্থ ও বিনিয়োগ মন্ত্রী তু নাইং বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে দেশে-বিদেশে মিয়ানমারের যেসব নাগরিক রয়েছেন তাদেরকে এই তহবিলে সহায়তা প্রদানের জন্য আহবান জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের বেশির ভাগ মানুষই সেনা শাসন বিরোধী। এজন্য জান্তা সরকারকে নানাভাবেই প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে। জান্তা বাহিনী যেমন সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে, তেমনি জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবেও একঘরে হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আঞ্চলিক গ্রুপ আসিয়ানকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। চীনের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও জান্তা সরকারকে এই বৈঠকের অংশ করা যায়নি। এর পরেই ভিয়েতনামের হ্যানয়ে শুরু হয়েছে আসিয়ানের আরেকটি বৈঠক। সেখানে জান্তা সরকারের কোনো প্রতিনিধি নেই। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে ঐক্য সরকারের প্রতিনিধিকে। আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশের গ্রুপে মিয়ানমারও এক সদস্য।
যাহোক, গত এপ্রিল মাসে ঐক্য সরকার গঠিত হয়েছে ‘ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি’র বেশির ভাগ নির্বাচিত এমপিকে নিয়ে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন জাতিগতভাবে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি এবং স্বৈরশাসক বিরোধী যোদ্ধা গ্রুপগুলো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই জান্তা বিরোধীরা উল্লিখিত তহবিলের অর্থ সংগ্রহের জন্য সহায়তা দিয়ে চলেছে। কিন্তু ঐক্য সরকার স্বেচ্ছা কর প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে মাত্র গত আগস্ট মাসে।
ঐক্য সরকার গঠিত সেনা বাহিনীর খরচ বাদ দিয়ে শুধু সামাজিক ও মানবিক সহায়তার জন্য ঐক্য সরকার ৮০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের আশা করছে। ব্যয় খাতে এর সঙ্গে যুক্ত হবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক ও স্বৈর সরকারকে ত্যাগ করে জনগণের সঙ্গে যুক্ত হওয়া পুলিশ-সদস্য।