ডিএসইর লেনদেন ৮০০ কোটি টাকার ঘরে বড় দরপতন সঙ্গে লেনদেনে খরা
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার আগের সপ্তাহের টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর গতকাল বড় ধরনের দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। সূচকের বড় পতনের সঙ্গে লেনদেনের খরা দেখা দিয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর লেনদেন কমে ৮০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে যা গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ডিএসইতে ৮২৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। আর গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৩৭ কোটি টাকা। এদিকে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে শেয়ারবাজারের কিছু বিনিয়োগকারীর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছেন। ফলে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে মূল্য সূচকের বড় পতন দেখা যাচ্ছে।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে করোনার নতুন ধরন নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। আর লেনদেন শুরু হতেই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। তবে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে এই দরপতনের পেছনে করোনার নতুন ধরনের তেমন প্রভাব নেই। মূলত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে দেখা দেওয়া মতবিরোধের কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে। শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, করোনার নতুন ধরন নিয়ে সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েছে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার অত্যান্ত সংবেদনশীল। যে কোনো নেতিবাচক বিষয় শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে সার্বিকভাবে বর্তমান শেয়ারবাজার বিনিয়োগবান্ধব। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত আতঙ্কে বিক্রির চাপ না বাড়িয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভালো শেয়ারের বিনিয়োগ করা।
এবিষয়ে ডিএসইর সাবেক এক পরিচালক বলেন, আমি মনে করি করোনার নতুন ধরনের কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। কয়েকদিন ধরে যে দরপতন হচ্ছে তার মূল কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যকার সমন্বয়হীনতা। এটা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তবে আমরা আশা করছি আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে যে বৈঠক হবে, সেখান থেকে ভালো ফলাফল আসবে। যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ কমাবে।
রাজ্জাক নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, দেশে প্রথম যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়, সেসময় বড় দরপতন হয়েছিল তার কয়েক মাস পর বাজার চাঙ্গা হয়। এবার কী হবে বলা যাচ্ছে না।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১১ পয়েন্ট পড়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সূচকের পতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৮ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৭৭৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৬ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৫৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯১টির। আর ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৩৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা চলতি বছরের ২৭ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। ২৭ এপ্রিল ডিএসইতে ৮২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৯১ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ান ব্যাংকের ৫৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ওরিয়ন ফার্মা, সাইফ পাওয়ারটেক এবং এনআরবিসি ব্যাংক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৬৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯২টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।