শেয়ারবাজারে বড় দর পতনের কারনে আতঙ্ক বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে
মাসুদ মিয়া : টানা ৬ কার্যদিবস দরপতন পর সোমবার সামান্য সূচক বাড়লেও গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় দর পতন হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সাম্প্রতিককালে কিছু দূরত্ব ও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। যে কারণে শেয়ারবাজারে হঠাৎ করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এরফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা ও আতঙ্ক বাড়ছে। তারা বলছেন, বৈঠকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব ও জটিলতা নিরসনের পথ তৈরি করতে হবে। যা বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।
এবিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, এখন এমন কোনো কারণ দেখছি না যে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটবে। তিনি আরও বলেন, তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এই দরপতনের আগে বাজার কিন্তু অনেকটাই উঠেছে। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ হয়তো এখন প্রফিট টেকিং করছেন। ফলে বিক্রির চাপ বাড়ায় দরপতন হচ্ছে। তিনি আশা করেন সামনে শেয়ারবাজার আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।
এবিষয়ে বিনিয়োগকারী বাচ্চু বলেন, শেয়ারবাজার খুবই সেনসিটিভ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সাম্প্রতিককালে কিছু দূরত্ব ও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। একানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।
আর কোনো কারণে বাজারে একটু দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। সবাই তখন বিক্রি করতে চায়। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে গিয়ে পতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এখনো হয়তো সেটাই হচ্ছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুর ৫ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু সূচকের বড় উত্থান বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে লেনদেনে অংশ নেওয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে থাকে। ফলে দেখতে দেখতে ঋণাত্মক হয়ে পড়ে সূচক। লেনদেনের শেষদিকে পতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ফলে সূচকের বড় পতন দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৭০৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৫১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৫১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ২৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬৬টির। আর ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৭০৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে ৪৩৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আইএফআইসি ব্যাংক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জিনেক্স ইনফোসিস এবং ফরচুন সুজ। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৮টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।