হাফ ভাড়া থেকে আন্দোলন আবারও ‘নিরাপদ সড়কে’
শরীফ শাওন : সকাল থেকেই রাজধানীর রামপুরা, শান্তিনগর এলাকাসহ সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ‘নিরাপদ সড়ক দাবি’তে অবস্থান ও বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি পরিবহন আটকে চালকের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করতে দেখা যায়।
বুধবার সকালে মর্নিং গ্লোরী স্কুলের ছাত্র আতিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। অজ্ঞাতনামা একটি পরিবহন তাকে আঘাত করে পালিয়ে গেলে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভার পাকিজা গার্মেন্টসের সামনে অবস্থান নেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে প্রায় ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এর আগে মাঈনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় নামে রাজধানীর এক শিক্ষার্থী সড়কে প্রাণ হারান।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সকাল থেকেই রামপুরা, শান্তিনগর ও জর্জকোট এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে রামপুরার ডিআইটি সড়ক এবং শান্তিনগর এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে আশপাশের প্রধান সড়কগুলোতেও যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টায় রাজধানীর বনানি, মালিবাগ, মহাখালি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচলে ধীরগতি দেখা যায়।
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ১১ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৮ সাল থেকে আন্দোলন করে আসলেও সরকারের কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এতে প্রতিদিনই সড়কে শিক্ষার্থীদের হতাহতের ঘটনা ঘটছে। আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ দাবি চলমান থাকবে।
দাবিতে তারা উল্লেখ করেন, ১. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নাঈম হাসান ও মাইনুদ্দীন ইসলাম দুর্জয়ের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। ২. সারাদেশের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফভাড়া নিশ্চিত করতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ জন্য দিন রাত বা ছুটির দিনসহ কোনও শর্ত জুড়ে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসি’র বাস বাড়াতে হবে। ৩. সব ধরনের পরিবহনে নারীদের অবাধ যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে।
তাদের সঙ্গে সৌজন্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ৪. লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস কার্যক্রম ও লাইসেন্স দানে বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকার ব্যবস্থা নিতে হবে। ৫. সব সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
৬. সব রুটে প্রতিযোগিতা বন্ধে এক গ্রুপ বা কোম্পানির মাধ্যমে সব বাস চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাস অনুযায়ী মালিকদের মধ্যে লাভের টাকা বন্টনের নিয়ম করতে হবে। ৭. শ্রমিকের নিয়োগপত্রে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। বাস চালক ও হেলপারদের চুক্তির পরিবর্তে সব গণপরিবহন টিকিট পদ্ধতিতে চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. গাড়ি ও চালকের কর্মঘণ্টা এক নাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি হতে পারবে না। বাসে দুজন চালক ও দুজন সহকারী থাকতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল তৈরি করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাক ও ময়লার গাড়ি চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নির্ধারণ করতে হবে। ১১. মাদক প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে লাশের মিছিল থেকে রাজশাহী বিশ^বিদ্যারয়ের প্রক্টরিয়াল টিম কর্তৃক ছাত্রনেতা মহব্বত হোসেন মিলনকে তুলে নেওয়ার প্রতিবাবে মশাল মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিকেল সাড়ে ৫ টায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক।
শর্তসাপেক্ষে আজ থেকে রাজধানীর গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে দুপুর ১১টায় চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, সিদ্ধান্ত হলে সবার জন্য তা প্রযোজ্য হবে। সারাদেশে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করতে হবে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয় এবং ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এই সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠিদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এ আন্দোলন গণবিক্ষোভে পরিণত হয়।