কোভিড পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে মানুষের বাস্তুচ্যুতি
সোহেল রহমান : কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে। আলোচ্য বছরে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ২৮ কোটি ১০ লাখ। এটি এর আগের বছরের (২০১৯) তুলনায় প্রায় ২০ লাখ কম। এদিকে অভিবাসীর সংখ্যা কমলেও বিপর্যয়, সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা অস্বাভাবিক বেড়েছে। লাখ লাখ বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় গৃহহীন হতে বাধ্য হয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
জাতিসংঘের ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’ (আইওএম) কর্তৃক বুধবার প্রকাশিত ‘বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২’-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ২০১৯ ও ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী অভিবাসন খাতের আদ্যপান্ত তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিষয় বিশ্লেষণে অভিবাসনের ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক কারণগুলো বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশকালে আইওএম-এর মহাপরিচালক অ্যান্টোনিও ভিটোরিনো বলেন, ‘=আমরা একটি বৈপরীত্য লক্ষ্য করছি, যা মানব ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। কোভিড-১৯- এর কারণে শত কোটি মানুষ আটকা পড়েছে। তারপরেও লাখ লাখ বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় বিপুল সংখ্যক মানুষ গৃহহীন হতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে দুর্যোগ, সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫ লাখ, যা এক বছর আগে ছিলো ৩ কোটি ১৫ লাখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ১৯৭০ সালে ছিল ৮ কোটি ৪০ লাখ। ২০২০ সালে ২৮ কোটি ১০ লাখে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মানুষ-ই (৯৬.৪ শতাংশ) যেদেশে জন্মগ্রহণ করে সেদেশেই বসবাস করে। কোভিড পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী আকাশ পথে যাত্রীসংখ্যা ৬০ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে যাত্রীসংখ্যা ছিল ৪৫০ কোটি, ২০২০ সালে এটি ১৮০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী বসবাস করা বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ। বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করেও প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি দেশে পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ এসেছে প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে। যারা গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) দেশগুলোতে প্রধানত ‘নি¤œ-দক্ষ’ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। পেরিত এই রেমিট্যান্স বাংলাদেশের জিডিপি’র ৬ শতাংশের বেশি এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক আয়ের উৎস।
প্রতিবেদন প্রকাশকালে আইওএম বাংলাদেশ-এর অফিসার ইন্-চার্জ ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর কোভিড-১৯ অতিমারির নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে। অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেছে। অভিবাসীরা গন্তব্য দেশে উন্নত অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য অভিবাসন করে এবং তার পরে নিজ দেশে জীবন-যাত্রার মান বাড়াতে সহায়তা করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোয় উদ্বুব্ধ করতে বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে নগদ প্রণোদনা স্কিমের সর্বোচ্চ সীমা তিনগুনেরও বেশি বাড়িয়েছে। রেমিট্যান্স সুবিধাভোগীরা আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত পাঠানোর ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পান। এছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোর উৎসাহ আরও বাড়াতে কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করেছে।