দেশের ৫ ইঞ্জিনিয়ার সরকারের ১৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন : মো. হারুন অর রশীদ
শাহীন খন্দকার : ইঞ্জিনিয়ার মো. হারুন আর রশিদ আরো বলেন, গত বছর করোনা শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিয়ে আসার আহ্বান জানান। সেই আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরির কাজ শুরু করি।
কেন্দ্রীয় মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এবং সুরক্ষা অ্যাপ তৈরির সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। তবে এই কাজটি ছিল তাদের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও বললেন। সারা দেশে টিকার উপযোগী জনসংখ্যা ১২ কোটি। তাদের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে এসে একটি ব্যবস্থাপনা তৈরি করাটা ছিল দলটির জন্য বেশ কঠিন একটি কাজ। তাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল সময়ের সীমাবদ্ধতা। পুরো ব্যবস্থাটি তৈরি করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল মাত্র তিন সপ্তাহ।
এ ছাড়া অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা।এনআইডি সার্ভার থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন তথ্য যাচাই করে থাকে। সার্ভারের নির্দিষ্ট ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সুরক্ষা অ্যাপের জন্য তথ্য চাইতে গেলেও যেন এনআইডি সার্ভার ঠিক থাকে, সেটি মাথায় রাখাও ছিল দলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ। একসঙ্গে সব মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সংযোগ স্থাপন করে নাগরিকদের কাছে প্রতিটি এসএমএস বার্তা নিশ্চিত করেছে।
তাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল সার্ভারের চাপ। একসঙ্গে প্রচুর মানুষ একই ওয়েবসাইট থেকে নিবন্ধন করতে চাইলে সার্ভারে চাপ পড়ে। এতে সার্ভার ডাউন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিজেদের সার্ভার অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস বা গুগল ক্লাউডে রেখে থাকে। এ ধরনের ক্লাউডে সার্ভার রাখার অসুবিধা হলো এতে তথ্য দেশের বাইরে চলে যায়। জনসাধারণের তথ্যের নিরাপত্তার জন্য সার্ভার এসব ক্লাউডে রাখে না বাংলাদেশ সরকার। এই চ্যালেঞ্জ উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য দলটি ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার ব্যবহার করছে।
তাদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ ছিল টিকা নিবন্ধন করতে গিয়ে যেন সবাই ভিড় না করেন। নিবন্ধন করার জন্য ভিড় করলে সেখান থেকেও করোনা ছড়ানোর সুযোগ থাকে। তাই নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে নির্বিঘœ করার জন্য ‘সেলফ রেজিস্ট্রেশন’-এর ব্যবস্থা রাখা হয়, যেন যে কেউ চাইলে ঘরে বসে নিবন্ধন করতে পারেন। ফলে টিকা নিবন্ধন করার জন্য লজিস্টিকস, জনশক্তিসহ পেছনের বিশাল পরিমাণের খরচও বাঁচিয়ে দিয়েছে দলটি। টিকার অগ্রাধিকার বাছাইয়ের জন্যও এই প্রযুক্তিগত সমাধান করেছে সহজতর।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের টিকা নিশ্চিত করার জন্য তাঁদের আলাদা প্রোগ্রামিং করতে হয়েছিল। তাঁরা সাধারণ বয়সসীমার মধ্যে না থাকলেও তাঁদের এনআইডি নম্বর দিয়ে যেন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হয়েছিল সুরক্ষা টিমকে। টিকাকেন্দ্রের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধন করেছে নিয়ন্ত্রিত। আবার বিদেশগামী ব্যক্তি এবং শিক্ষার্থীরা দেশ থেকে টিকা নিয়ে যেতে পারলে সে দেশে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে না। এতে তাঁদেরও বেশ অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে।
ইঞ্জিনিয়ার মো.হারুন অর রশীদ বলেন, করোনা টিকা প্রদান করার জন্য সুরক্ষা অ্যাপ তৈরি করা হলেও ভবিষ্যতে এ ব্যবস্থার সুফল পাবে বাংলাদেশ। বিশাল এসব তথ্যভা-ার ভবিষ্যতে নানা রকম পরিসংখ্যানে ব্যবহার করা যাবে। সুরক্ষা সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়মিত শিশুদের টিকাসহ অন্যান্য টিকা অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে সহজ ইউজার ফ্রেন্ডলি এই সিস্টেম অন্যান্য দেশের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরবরাহ করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের সিস্টেম উদ্ভাবনে সম্পৃক্ত করা গেলে সরকারি সেবার মান যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সরকারের বিপুল অর্থেরও সাশ্রয় হবে এবং পাশাপাশি অনেক মেধাবী সফটওয়্যার প্রকৌশলী বিদেশমুখী না হয়ে সরকারি চাকরিতে নিজেদের নিয়োজিত করতে উৎসাহী হবেন।
সুরক্ষা গ্রুপের সদস্য মো.হারুন অর রশীদ আরও বলেন, জাতীয় টিকা কমিটির সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন, সেসব প্রতিষ্ঠান সিস্টেম বিক্রয়দরপত্র দিয়েছেন তাদের মধ্যে জাপানের সিস্টেমের বিক্রয়মূল্য চাওয়া হয় ১৫০ কোটি টাকা। তাদের প্রস্তাবের বিপরীতে আইসিটি ডিভিশনের কেন্দ্রীয় মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার তৈরি করা ইঞ্জিনিয়ররা নিজেদের প্রস্তাব উপস্থাপন করে এবং নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে তৈরি করে দেওয়ার কথা জানায়। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমটি সুন্দরভাবে কাজ করার কারণে তাদের সিস্টেমটি তৈরির সুযোগ দেয় ‘জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কমিটি’। তাদের সময় দেওয়া হয় তিন সপ্তাহ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা সিস্টেমটি তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়।