নিরাপদ সড়ক দাবিতে রামপুরায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শরীফ শাওন : শিক্ষার্থীদের একাংশ আজ ‘নিরাপদ সড়ক দাবি’তে রামপুরা ব্রিজের ওপর বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন। শুক্রবার পৌনে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। খিলগাঁও মডেল হাইস্কুল, খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
এসময় তারা সারাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর করাসহ ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। বিভিন্ন শ্লোগানের মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হলেও যানবাহন চলাচল ছিলো স্বাভাবিক।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, আন্দোলনে অপ্রিতিকর ঘটনা ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সড়কে যেন বিশৃঙ্খলা না ঘটে সে বিষয়েও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ১. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নাঈম হাসান ও মাইনুদ্দীন ইসলাম দুর্জয়ের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। ২. সারাদেশের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফভাড়া নিশ্চিত করতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ জন্য দিন রাত বা ছুটির দিনসহ কোনও শর্ত জুড়ে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসি’র বাস বাড়াতে হবে।
৩. সব ধরনের পরিবহনে নারীদের অবাধ যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সঙ্গে সৌজন্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ৪. লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস কার্যক্রম ও লাইসেন্স দানে বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকার ব্যবস্থা নিতে হবে। ৫. সব সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ৬. সব রুটে প্রতিযোগিতা বন্ধে এক গ্রুপ বা কোম্পানির মাধ্যমে সব বাস চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাস অনুযায়ী মালিকদের মধ্যে লাভের টাকা বন্টনের নিয়ম করতে হবে।
৭. শ্রমিকের নিয়োগপত্রে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। বাস চালক ও হেলপারদের চুক্তির পরিবর্তে সব গণপরিবহন টিকিট পদ্ধতিতে চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. গাড়ি ও চালকের কর্মঘণ্টা এক নাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি হতে পারবে না। বাসে দুজন চালক ও দুজন সহকারী থাকতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল তৈরি করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাক ও ময়লার গাড়ি চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নির্ধারণ করতে হবে। ১১. মাদক প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীরা এর আগে চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। এছাড়াও রাজধানীতে হাফ ভাড়া কার্যকর করায় অনেক শিক্ষার্থী রাজপথ ছেড়ে দেন। রাজধানীতে হাফ ভাড়া কার্যকর হলেও শিক্ষার্থীদের একাংশ সারাদেশে তা কার্যকর করাসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিচ্ছিন্নভাবে এ আন্দোলন অব্যাহর রেখেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ১টা ৪০ মিনিটে হাতিরঝিল এলাকা থেকে মিছিল করে এসে রামপুরা ব্রিজে মানববন্ধনে দাঁড়ান স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী। শুক্রবার সকাল ১০টায় আবারও রামপুরা ব্রিজে অববস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে দুপুর সোয়া ২ টায় তারা এলাকা ত্যাগ করেন। এসময় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করেন খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া।